মাওলানা সাঈদীর সাক্ষী সুখরঞ্জণকে অপহরণ

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরণ করেছে ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) পুলিশের লোকজন। সাক্ষীর নাম সুখরঞ্জন বালী। তিনি ছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত সাক্ষী। আজ সোমবার তিনি
এসেছিলেন ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। সাক্ষ্য দিতে আসার সময় ট্রাইব্যুনালের প্রবেশপথে তাকে ডিবি পুলিশের লোকজন ধরে যায়।
সাক্ষী অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল বর্জন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। আইনজীবীদের উপস্থিতি ছাড়াই বিকালে মাওলানা সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক গ্রহণ শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
মাওলানা সাঈদীপক্ষের আইনজীবীরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন সাক্ষীকে   ধরে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় তাকে থাপ্পড় মেরেছে ডিবি পুলিশের লোকজন।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছেন  সাক্ষী অপহরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
যেভাবে সাক্ষী অপহরণ হলো
আইনজীবী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এবং অন্য কয়েকজন আইনজীবী একটি গাড়িতে করে ট্রাইব্যুনালে আসছিলেন। তাদের সাথেই ছিলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী। তাদের বহনকারী গাড়ি ট্রাইব্যুনালের পাশে মাজারসংলগ্ন গেটে আসার পর দায়িত্বরত পুলিশ গাড়ি থামান। পুলিশ সব আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নামতে বলেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী, হাসানুল বান্না সোহাগ সবাই নেমে আসেন। তাদেরকে হেঁটে ট্রাইব্যুনালে যেতে বলেন  দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম পক্ষাগাতগ্রস্ত হওয়ায় কেবল তাকে গাড়িতে চড়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে যাওয়ার অনুমতি দেন পুলিশ। গাড়িতে থাকা সাক্ষীকে সুখরঞ্জন বালীকেও নেমে আসতে বলেন তারা। সাক্ষী নেমে আসেন।
সাক্ষীসহ অন্য আইনজীবীরা গেটে দাঁড়িয়ে থাকেন। অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ  ভেতরে যান অন্য আইনজীবী এবং সাক্ষীর জন্য গেট পাশ আনতে। (অন্যান্য দিন এ ধরনের কড়াকড়ি ব্যবস্থা থাকে না। সাক্ষী এবং আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা  সরসারি ট্রাইব্যুনালের সামনে চলে যেতে পারতেন। শুধু আজই বাইরের গেটে এভাবে কড়াকড়ি এবং চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।)
এ সময়  আসামিপক্ষের জুনিয়র আইনজীবী হাসানুল বান্না সোহাগ এবং সাক্ষী গেটে  দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন চারজন সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি এসে নিজেদের ডিবি পুলিশের লোক পরিচয় দেন। তারা সাক্ষীর নাম জিজ্ঞেস করেন। তারপর  সাক্ষীর দুপাশ থেকে দুজন করে পুলিশ হাত ধরে রাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। আইনজীবী এর  প্রতিবাদ করলে  ডিবি সদস্যরা জানান, পাশের কন্ট্রোল রুমে নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর সাক্ষীকে টেনে শিক্ষাভবনের দিককার পুরনো হাইকোর্ট গেট থেকে বের করে দোয়েল চত্বরের দিকে ট্রাইব্যুনালের অপর গেটের দিকে নিয়ে যায়। এসময় ডিবি পুলিশের এক সদস্য মোবাইলে ফোন করলে ট্রাইব্যুনালের ভেতরের চত্বর থেকে একটি পুলিশের  পিকআপ ভ্যান গেটে আসলে সাক্ষীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া  হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী জানান, তাকে গাড়িতে ওঠানোর সময় থাপ্পর দেয়া হয় এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ধাক্কা দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনাল বর্জন
সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবহিত করেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন কোর্ট শেষে আমরা বিষয়টি দেখব। আসামিপক্ষের প্রধান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন সাক্ষীকে এ অবস্থায় রেখে আমরা বিচারকাজে অংশ নিতে পারি না। এখনই পদক্ষেপ নেয়া হোক।
এরপর ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুকে নির্দেশ দেন অপহরণের বিষয়টি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এবং তাকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে। তিনি আদেশের সাথে সাথে তাকে কোর্ট থেকে বের হয়ে চেম্বারে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার নির্দেশ দেন।
সাড়ে ১২টার দিকে গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে আসেন। তখন অন্য একটি মামলার শুনানি চলছিল। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক সে শুনানি বন্ধ রেখে গোলাম আরিপ টিপুর কাছ থেকে সাক্ষীবিষয়ক পরিস্থিত শোনার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, চলমান আবেদনের শুনানি শেষ হোক। শুনানি শেষ হলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যনালের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আইনের কোনো লঙ্ঘন তারা করেননি। ট্রাইব্যুনালের প্রবেশপথে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন একজনকে ধরে  নিয়ে যাবার বিষয়ে আপনাকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তার কি হল?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি আজ সেখানে।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একটা হতে পারে যে কারা এ কাজ যারা করেছে তারা চিনতে পারেনি অথবা ঘটনা ঘটেনি।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আদৌ এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বিচারপতি নিজামুল হক আবারো বলেন, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে কেউ অপহরণ হয়েছে কিনা?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, কেউ অপহরণ হয়নি।
এর সাথে সাথে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার কয়েকজন আইনজীবী এখানে এসে ঘটনা বলল প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেটা মিথ্যা হয়ে গেল? মিজান সাহেব কি তাহলে মিথ্যা বলেছেন?  তার সাথে থাকা আমাদের অন্য আইনজীবীরা মিথ্যা বলেছেন?  আর চিফ প্রসিকিউটর পুলিশের কথা শুনে বলে দিলেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি?
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, দুইটার পর আমরা বিষয়টি দেখব। এর মধ্যে আমরাও একটু খোঁজখবর  নিয়ে দেখি কি হয়েছে। ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক অনুরোধ করেন বিষয়টি সুরাহা করে তারপর কোর্ট বিরতিতে যাক।
এরই মধ্যে সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যাওয়াসংক্রান্ত মোবাইল ফোনে তোলা ছবি প্রিন্ট করে ট্রাইব্যুনাল কক্ষে প্রবেশ করেন আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির। আসামি পক্ষ ট্রাইব্যুনালের সামনে সে ছবি জমা দেন। তিনজন বিচারপতি তা দেখেন। এরপরও তারা দুপুরের বিরতিতে যাবার প্রস্তুতি নেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিজানুল ইসলাম কিছু  কথা বলেন। এসময় বিচারপতিরা চেয়ার থেকে উঠে যান। চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, এখন আর শোনা হবে না। মিজানুল ইসলাম তীব্র ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের কথাও শোনাও হবেনা? তাহলে আমরা এ কোর্টে আসব কিভাবে? আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয় কোর্টরুমে। মিজানুল ইসলাম উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এরই মধ্যে কোর্টরুম ত্যাগ করে চলে যান বিচারপতিরা।
সকালে শুনানি চলাকালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডন্টে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদনী ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনাল বর্জনের পর খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানি না হতভাগ্য সাক্ষীর ভাগ্যে কি আছে? বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে এখন লোকজন গুম হচ্ছে। আমরা জানি না এ সাক্ষীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। কারণ সরকার পক্ষ তাকে অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করছে। কোর্টে আসার পথে সাক্ষী অপরহণ করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
রাষ্ট্রপক্ষের   অভিযোগ : সাক্ষী অপহরণ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুখরঞ্জন বালী আসামিপক্ষের কোনো সাক্ষী নয়। আজ সাক্ষীর জন্য নির্ধারিত কোনো তারিখও ছিল না।  সে তাদের কাছে গেল কি করে সেটাই আমাদের প্রশ্ন। সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল বর্জনের অজুহাত হিসেবে এ ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে।
কে এই সুখরঞ্জন বালী : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৯৭১ সালের ২ জুন পিরোজপুরের উমেদপুরে হিন্দুপাড়ায় বিশাবালী নামে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে নারকেল গাছে সাথে বেঁধে রাজাকাররা হত্যা করে। মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই বিশাবালীর ভাই হলেন সুখরঞ্জন বালী। রাষ্ট্রপক্ষ তাকে সাক্ষী মেনেছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ তাকে হাজির করতে পারেনি।
বিশাবালীকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছিল চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর সুখরঞ্জনবালী নিখোঁজ হয়েছে।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই ৪৬ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে  জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক। এই ৪৬ জন সাক্ষীর তালিকায় সুখরঞ্জন বালীর নামও ছিল।
সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যেসব কারণ উল্লেখ করেছিল তার মধ্যে রয়েছে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের হুমকির কারণে  অনেকে আত্মগোপন করেছে, কেউ বাড়ি থেকে নিখোঁজ, কেউ গোপনে ভারতে  পালিয়ে গেছে, কেউ অসুস্থ, কারো কারো স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে।
৪৬ জনের সেই তালিকা থেকে ১৫ জনের জবানবন্দী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ২৯ মার্চ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেই ১৫ জনের মধ্যেও ছিলেন সুখরঞ্জন বালী।
রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষী সম্পর্কে বলেছিল সে নিখোঁজ সেই সুখরঞ্জন বালী আজ এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে।
রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষী হাজির করতে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল তাকে মিথ্যা এবং প্রতারণা বলে অভিযোগ করেছিল আসামিপক্ষ। আসামি পক্ষ অভিযোগ করে বলেছিল সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের শেখানো মতে মিথ্যা বলতে রাজি নয় বিধায় তাদের হাজির করা হচ্ছে না।
কড়া নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে : আজ ট্রাইব্যুনালে ছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি যা আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারণত ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে পাশ নিয়ে প্রতিদিন গেট পাশ নিয়ে সাংবাদিক আইনজীবী এফ’ আসামির স্বজনকে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু আজ বাইরের গেটে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা কর্র্মী মোতায়েন ছিল। প্রত্যেকের আইডি কার্ড চেক করে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়। মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে বলেন, আজ কি কারণে এরকম ব্যবস্থা করা হল তা আমরা জানি না এবং  এরকম যে ব্যবস্থা করা হবে তাও আমাদের জানানো হয়নি। জানালে আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারতাম। তিনি বলেন নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব হল আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা যদি আমাদের হয়রানি করে, আইনজীবীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং সাক্ষীকে ধরে নিয়ে যায় তাহলে সে নিরাপত্তা কর্মী কিসের জন্য?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ গাড়ি চেক করতেই পারে, আগতদের পরিচয় জানতে চাইতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের আইনজীবীদের সাথে আজ যা ব্যবহার করছে তা কোনোমতেই  গ্রহণযোগ্য নয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুজন আইনজীবীকে এখনো পুলিশ বাইরে আটকে রেখেছে। তাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না। বলা হচ্ছে পাশ ছাড়া কারো ভেতরে যাবার অনুমতি নেই।  কিন্তু বাইরে তো  গেট পাশ সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থাই নেই। ভেতরেই যদি প্রবেশ করতে না দেয়া হয় তাহলে সে পাশ সংগ্রহ করবে কিভাবে? তিনি বলেন আমাদের আইনজীবীদের সাথে একরকম এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে আরেক রকম ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ অভিযোগের পর ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিনকে ডেকে পাঠান এবং এ বিষয়ে জানতে চান।
নতুন নিরাপত্তা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরাই এ নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ট্রাইব্যুনালকে হাট বানাতে দিতে চাই না। আমরা দেখতে  পাই প্রতিদিন গাউন পরে অনেক লোক এখানে আসেন যারা  কোনো পক্ষের আইনজীবী নন। তারা কিভাবে পাশ নিয়ে এখানে আসেন? আমরা আগেই বলেছি আসামির আইনজীবী ছাড়া শেখার জন্য কেউ কেউ আসবেন। কিন্তু তার একটা মাত্রা তো থাকতে হবে। আমরা আপনাদের জন্য একশ আইনজীবী আসতে দিতে পারি না।
তাজুল ইসলাম  গতকালের ঘটনার জন্য ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন কারণ ট্রাইব্যুনাল বলেছেন তাদের নির্দেশেই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে।
সুখরঞ্জন বালী কার সাক্ষী? সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।  তিনি এবং আরেক সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহাকে আসামিপক্ষের সাক্ষী হিসেবে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। এ বিষয়ে আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন আপনারা যাকে খুশি সাক্ষী হিসেবে আনতে পারেন তবে সমন জারি করা  হবে না।  এরপর গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী  গণেশচন্দ্রকে হাজির করে আসামিপক্ষ  তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে আজ আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল  তাকে আসামিপক্ষের সাক্ষী উল্লেখ না করেননি। মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি এখন  আমাদের  মানে আসামিপক্ষের সাক্ষী। তাকে সে হিসেবে উল্লেখ করা হোক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন তিনি আসামি পক্ষের সাক্ষী।

 সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

Powered by Blogger.