জামায়াতের সাথে ইসি বিতর্কিত আচরণ করতে পারে না : কাদের সিদ্দিকী

কৃষকক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এমপি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৩৮টি দলের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিতর্কিত দল
। কিন্তু ইসি তাদের সাথে বিতর্কিত আচরণ করতে পারে না। কারণ তারা আপনার নিবন্ধিত দল। তিনি প্রশ্ন করেন, আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদৌ এই কমিশনের দ্বারা হবে কিনা? দায়িত্বহীন কর্তৃত্ব অর্থহীন। নির্বাচন কমিশন অনেকটা দায়িত্বহীন কর্তৃত্ব করার মতো। কমিশনের উচিত তার দায়িত্ব কি তা বোঝা। তবে ইসির সংলাপ ১৮দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক মুফতি আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। এরই মাধ্যমে কমিশনের সংলাপে যোগ না দেয়ার ইঙ্গিত জানাল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
আজ সোমবার ৬টি দলের সাথে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত সংলাপের সময়সূচী নির্ধারিত থাকলেও ইসলামী ঐক্যজোটের পথ অনুসরণ করে সংলাপে অনুপস্থিত থাকে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনও। সংলাপে অংশ নেয় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ। সংলাপে নির্বাচন কমিশনের প থেকে সিইসিসহ উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, আব্দুল মোবারক, শাহ হাফিজ, শাহ নেওয়াজ, যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকতারা।
দুপুর ৩টিায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এমপির নেতৃত্বে ৭সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশ নেন। তিনি বলেন, ইসির এই সংলাপের দাওয়াত আমি প্রথমে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। রাজনৈতিক দল আর এনজিও এক কথা নয়। রাজনীতির পানিতে রাজনীতিবিদরা থাকবেন, এনজিওরা নয়। তিনি বলেন, ভোটারদের সঙ্গে আপনাদের কাজ করতে হয়। সেই কাজ বেশি করতে হয় রাজনৈতিক দলের। তাই ভোটারদের ব্যাপারে অনেক বেশি অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক দলের। তিনি বলেন, আপনাদের দেখলে খুব দৃঢ় মনে হয় না। কিন্তু সামনে খুব সংঘাতপূর্ণ সময় আসছে। তখন যারা দৃঢ় থাকতে পারবেন তারাই টিকে থাকতে পারবেন। আপনারা যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছেন দৃঢ় থাকবেন। আশা করি দৃঢ়ভাবে টিকে থেকে নির্বাচন সম্পন্ন করবেন।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়ে জাল ভোট দেয়া সম্ভব উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ইভিএম দিয়ে আমার সাধারণ সম্পাদক আটবার জালভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ধরতে পারেনি। এভাবে হতে থাকলে সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে। তবে এটা ধরার মতো এখন কম্পিউটার আছে। আপনারা সে ব্যবস্থাও করবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী আইনে আছে, অন্তত তিন বছর একটি দলের সদস্য থাকার পর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। কিন্তু গাজীপুরে সিমিন হোসেন রিমি কি একদিনের জন্যও কোনো দলের সদস্য ছিলেন।
ঢাকায় নির্বাচনী আসন সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকায় এক থেকে চারটি আসন দিলেই তো যথেষ্ট। তবে সর্বোচ্চ ৮টি আসন থাকতে পারে। এর বেশি কোনোভাবেই ঠিক হবে না। ঢাকায় কি করে গত নির্বাচনে ১৫টি আসন করা হলো? গ্রাম থেকে কেটে এনে ঢাকায় বাড়ানো হলো। কিন্তু কথা হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যদি ঢাকায় আসন বাড়াতে হয় তাহলে  গ্রামেও আসন বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য তাদের স্বতন্ত্র সচিবালয় দরকার। কেননা তাদের যথেষ্ট লোকবল নেই। টাকা-পয়সা ধার-দেনা করতে হয়। বাইরের মানুষের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি মামলা থাকবেই। বাংলাদেশের সবাই কেয়ামত পর্যন্ত বিএ পাস করতে পারবেন না। যারা টিপসই দিতে পারেন তারাও যাতে নির্বাচন করতে পারেন। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক আগামী নির্বাচন সন্ত্রাস ও কালো টাকামুক্ত করার দাবি জানান।
সকাল ১০টায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে এই সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হয়। অধ্য আবুল বাশার জয়নুল আবেদনি জুবায়েরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠকে তারা সারাদেশে একদিনে নির্বাচন না করা, বিভাগীয় বা জেলা ভিত্তিকভাবে জাতীয় নির্বাচন করা, ভোটগ্রহণে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু করা, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অবাধ স্বাধীনতা দেয়া, আগের কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রা করা, রাজনৈতিক দলগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করা এবং নিবন্ধিত দলগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেয় দলটি।
জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দলই হলো নির্বাচন কমিশনের আসল স্টেক হোল্ডার। কমিশন সব সময় পরিপূর্ণ স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে। তাই কমিশন চায় সব দলের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে। তিনি বলেন, সব ধরনের আইন মেনে কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়। এটা করা গেলে দেশের গণতন্ত্র আরো সুসংহত হবে। দেশের গণতন্ত্র বিকাশে রাজনৈতিক দলগুলো খুব বেশি সময় পায়নি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অগণতান্ত্রিক শক্তি বারবারই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে।
বেলা ১১টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাথে শুরু হয় দিনের দ্বিতীয় সংলাপ। সংলাপে অংশ নিয়ে দলটির আমীরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, আমরা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের পক্ষে। তবে তার আগে এ বিষয়ে সব দলের আস্থা অর্জন করা জরুরি। সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে তিনি বলেন, জনসংখ্যা ভিত্তিতে নয়, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আইন সংশোধন করতে হবে। জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে আসা নেতারা সৎ ও যোগ্য না হলে দেশ যে চক্রে আছে সে চক্রেই থাকবে। এ জন্যই কমিশন যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে সবার মতামত নেয়ার সংস্কৃতি চালু করেছে। এর আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা প্রসঙ্গের বাইরে নানা রাজনৈতিক বক্তব্য দেন।
বিকাল ৪টায় সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, এ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের মনে নানা শঙ্কা-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার আমুল পরির্বত করা দরকার। এর সাথে কালো টাকা, পেশিশক্তি ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

Powered by Blogger.