দেড়শ বছর বাঁচতে 'বিস্ময় বড়ি' !

বাই চায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শতবর্ষ বেঁচে থাকার আশা করাটা এক রকম স্বপ্নের মতোই। এরই মাঝে অনেকেই পাড়ি দেন শতবর্ষ। তবে এ দলে দেখা যায় হাতেগোনা কয়েক জনকে। শতবর্ষ পাড়ি দিয়ে আপনি কি দেড়শ বছর বাঁচতে চান? না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে সেদিন আর বেশি দূরে নেই যে দিন মানুষের এই স্বপ্নটাও বাস্তবে রূপ নেবে
। সে লক্ষ্যে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী। প্রতিদিন একটি 'বিস্ময় বড়ি' বা ওয়ান্ডার পিল খেলেই দিব্যি সুস্থ শরীরে সেঞ্চুরি পার করে ফের একটা হাফ সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারবেন! এমনটাই দাবি এসব চিকিৎসা বিজ্ঞানীর।

আমাদের দেহের ছোটখাটো সমস্যা নিরাময় করবে এই ওয়ান্ডার পিল। আর স্টিম সেল থেরাপি সাহায্য করবে সুস্থ শরীরে এই দীর্ঘায়িত জীবন উপভোগ করতে। নিউসাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক পিটার স্মিথ সম্প্রতি সিডনিতে তার এক ভাষণে এ রকম আশার আলোই দেখিয়েছেন। 'ডেইলি মেইল' তার সেই বক্তব্য তুলে ধরেছে পাঠকদের সামনে। স্মিথ বলেছেন, 'শুধু তো বাঁচা নয়, সুস্থ শরীরে বাঁচতে হবে। এই বিশেষ ওষুধ সেবন, আমাদের লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করবে।'

হার্ভার্ডের জেনেটিসিস্ট অধ্যাপক ডেভিড সিনক্লেয়ারের দাবি, আমরা এমন একটা প্রযুক্তির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি, যার ব্যবহারে আগামী দিনে মানুষের পক্ষে সার্ধশতবর্ষ বেঁচে থাকাটা কোনো আকাশ কুসুম ব্যাপারই নয়। এই অসাধ্য খুব শীঘ্রই সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে। 'রেসভেরাট্রল' এমন একটি যৌগ, যা যৌবন ধরে রাখতে বা বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এটি রেড ওয়াইনের মধ্যে পাওয়া যায়। এই যৌগটিকে নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছেন সিনক্লেয়ার। অন্য একদল বিজ্ঞানী বলেছেন, কিছুদিন আগেও কোনো কোনো দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৮০ থেকে ৯০ বছর। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। এর মূলে রয়েছে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এবং তন্তু বা পেশীর ক্ষয় হওয়া। বর্তমানে যে পরীক্ষাটি চালানো হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দেহের ক্ষয়রোধ করা। এরই ধারাবাহিকতায় সিনক্লেয়ার একটি নতুন যৌগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন, যা এই 'রেসভেরাট্রল'-এর থেকে ১০০০ গুণ শক্তিশালী ও খুবই কার্যকরী।
সিনক্লেয়ার বলেছেন, 'আমাদের শরীরের মধ্যে ঘাটতি বা ক্ষয়ক্ষতি পূরণের এক অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। আর রেসভেরাট্রল-এর মতো যৌগ এই কাজকে ত্বরান্বিত করতে বিশেষ সাহায্য করে। এই যৌগের ফলে রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাংস ও পেশীতন্তুর ক্ষয়রোধ হয়ে থাকে। তার মতে, উদ্ভিদজাত যৌগ এই রেসভেরাট্রল, ইঁদুরের ক্ষত মেরামত করতে পারে। এই এনজাইম মানুষের শরীরেও রয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে আমাদের বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব। সম্ভব বার্ধক্যের ছাপ চেহারা থেকে দূরে সরাতে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সায়েনটিস্ট ব্যারোনেস সুসান বলেছেন, 'মানুষের জীবন দীর্ঘায়িত হলে ৬৫ বছরে পেঁৗছে সে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে পারবে। দৈহিক পরিশ্রমের বদলে অভিজ্ঞতার জোরে সে তখন মাথার কাজ করতে পারবে। শুধু ব্রেনই হয়ে উঠবে তার সব কাজের উৎস। তবে তিনিও জোর দিয়েছেন সুস্থ হয়ে বাঁচার ওপর। না হলে তো মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। আর তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেছেন যে, উন্নত চিকিৎসা বিদ্যার সুফল নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে মানুষ সুস্থ শরীরেই দেড়শ বছর বাঁচতে পারবে। আর সে দিন খুব বেশি দূরে নেই! শুধু ব্যবহার করতে হবে এই বিস্ময় বড়ি বা ওয়ান্ডার পিল।

Powered by Blogger.