কাঠগড়ায় শিল্পমন্ত্রী

সুপারিশ না মানায় শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) বিস্নচিং প্ল্যান্ট নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি টাকা অপচয়ের দায়ে জড়িতদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ সংসদীয় কমিটি বিভিন্ন সুপারিশ করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেসব সুপারিশ না মানায় তার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি মনে করছে, জাপানের মারুবিনি করপোরেশনের তৈরি করা এ প্ল্যান্ট সম্পর্কে মন্ত্রণালয় যত্নবান না হওয়ায় এটি আর কখনোই চালু হবে না। বুধবার সংসদে কমিটির ২৩তম বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, মুহিবুর রহমান মানিক, আলী আসগর, মেরাজউদ্দিন মোল্লা, সুলতানা বুলবুল, জাহিদ মালেক, কামাল আহমেদ মজুমদার অংশ নেন। বৈঠক সূত্র জানায়, কেপিএমের দুর্নীতি ছাড়াও প্রায় ২০০ কোটি টাকার নষ্ট সার আমদানি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এসব অনিয়মে সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে কমিটির সভাপতি অভিযোগ করেন। ওই সার আমদানির জন্য সঠিক প্রক্রিয়ায় এলসি খোলা হয়নি বলেও তিনি জানান। বৈঠক শেষে সংসদ ভবনের প্রচারকক্ষে প্রেসব্রিফিংয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, কেপিএম এর বিস্নচিং প্ল্যানটি কোনো দিন চালু হবে না। সরকারের ২০০ কোটি টাকা গচ্ছা গেল। মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে আরো যত্নবান হওয়ার দরকার ছিল। কর্ণফুলী কাগজ মিল নিয়ে অব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ২০০ কোটি টাকার বেশি কাজ। কাজটি মোটেই ভালো হয়নি। এদিকে বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, কেপিএম এর বিস্নচিং প্ল্যান্ট নিয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ কেন মানা হলো না তা নিয়ে মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্লেখ্য, কেপিএম এর বিস্নচিং প্ল্যান্ট নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সংসদীয় উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে আহ্বায়ক করে গঠিত উপকমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ আনোয়ারুল আশরাফ খান, এসএম আবদুল মান্নান, মেরাজউদ্দিন মোল্লা ও আলী আজগর। উপকমিটি প্রায় তিন বছর ধরে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, কেপিএম ও আশুগঞ্জ সার কারখানার বিভিন্ন অনিয়ম তদন্ত করে। ২২ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয় উপকমিটি। উপকমিটির প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, বিস্নচিং প্ল্যান্টের অধিকাংশ যন্ত্র পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সময়ই নষ্ট হয়ে গেছে। এ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত নকশাও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে। উপকমিটি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তুবতাবর্জিত। প্রকল্পের টেন্ডার ডকুমেন্ট ত্রুটিপূর্ণ। এ প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআইসি) ও শিল্প মন্ত্রণালয় চরম গাফিলতি ও উদাসীনতা দেখিয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি পুরনো। এ প্রকল্পে টাকা ছাড়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে কমিটি এ প্রকল্পে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা অপচয়ের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। তাকে এ অনিয়ম তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দায়িত্ব দেয়ারও সুপারিশ করে। এদিকে স্থায়ী কমিটি উপকমিটির সুপারিশের পাশাপাশি মারুবিনি করপোরেশনের পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) বাতিল করার সুপারিশ করে। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় ডিসেম্বর পর্যন্ত মারুবিনিকে কাজ চালানোর অনুমতি দেয়। আর এ কারণেই কমিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে। তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরেও মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এজন্য উপকমিটির সঙ্গে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে আবারো কেপিএম পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা গিয়ে দেখবে সংসদীয় কমিটির তদন্তে কোনো ত্রুটি ছিল কি না। প্রায় ২০০ কোটি টাকার নষ্ট সার নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, যে প্রক্রিয়ায় সার আমদানি করা হয়েছে_ তা সঠিক নয়। তারা মনে করেন সার আমদানিতে টেন্ডারের শর্ত পূরণ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা এ সারকে ব্যবহারযোগ্য হিসেবে নিশ্চয়তা দিলেও তারা বলেছেন, এ সারের কর্মক্ষমতা অন্যান্য সারের তুলনায় অর্ধেক হবে। গত নভেম্বরে এ সার এসেছিল। সার গুদামে ছিল। ইতোমধ্যেই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ সার পাথর হয়ে গেছে।

 source:হ্যালো-টুডে

Powered by Blogger.