ইয়াবা সুন্দরীদের ভাড়াটে স্বামী!

কক্সবাজার টু ঢাকা। বাসে আসতে নানা প্রশ্ন, নানা জিজ্ঞাসা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনেও তাই। এরপর ঢাকায় পৌঁছে হোটেলে উঠতেও সমস্যা। মহিলাদের একা চলা সত্যিই দুষ্কর। আর এসব ঝামেলা ও পুলিশের সন্দেহের তালিকা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই ‘স্বামী ‘ ভাড়া করা। সঙ্গে একটা স্বামী নিরাপদে থাকা যায়। এ ধরনের স্বামীর জন্য তেমন কাঠখড় পোড়ানোর
দরকার হয় না। হোটেলে রাতিবাসের ‘সুযোগ’ ও কিছু টাকার প্রস্তাব দিলেই হলো। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টিমের হাতে গ্রেফতার হওয়া ইয়াবা বিক্রেতা সেলিনা আক্তার জানিয়েছেন এ তথ্য । গত শনিবার বিকালে ফকিরাপুলের একটি হোটেল থেকে ১৪শ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয় সেলিনা আক্তার, হাবিবা বেগম ও তাদের ভাড়া করা দুই ‘স্বামী’ মাহবুব আলম ও শাহাবুদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেলিনা আক্তারের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার নুইয্যাছড়া। তাকে দেখলে মনেই হবে না তিনি বিবাহিত ও চার সন্তানের জননী। তার ভাড়াকৃত স্বামী মাহবুব আলম। তার বাড়ি টেকনাফের ফল্লনপাড়া। মাহবুবও বিবাহিত, দুই সন্তানের জনক।
অপরদিকে মিয়ানমার নাগরিক (রোহিঙ্গা) হাবিবা বেগম নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবি করেছেন। তার ভাড়া করা স্বামী শাহাবুদ্দিনও বিবাহিত। বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে। তারা চারজনই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। নিজের স্বামী রেখে স্বামী ভাড়া কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিনা বলেছেন, নিজ স্বামী সন্তানদের দেখাশুনা করে। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ছাড়াবার তো লোক চাই। আসল স্বামী সে কাজটি করে থাকে। তবে আসল স্বামী কী জানেন ভাড়া করা স্বামীর কথা-এমন প্রশ্নে তিনি নীরব থাকেন।
তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে তিনি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে ঢাকায় অধিক দামে বিক্রি করে আসছেন। এর আগে পথিমধ্যে পুলিশের হাতে একাধিকবার ধরাও পড়েছেন। তবে পুলিশকে ম্যানেজ করে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তার মতো কক্সবাজার এলাকার কয়েকশ নারী-পুরুষ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পুরুষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ‘স্ত্রী’ও ভাড়া করে থাকে। মাহবুব আলমকে স্বামী সাজিয়ে তিনি ইয়াবা ব্যবসা করছেন প্রায় দুই বছর ধরে।
অপরদিকে মাহবুব আলম বলেছেন, তিনি কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে টুরিস্ট জাহাজ ঈগলে চাকরি করেন। টুরিস্ট জাহাজেই পরিচয় সেলিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি নিজে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। সেলিনা আক্তার তাকে স্বামী সাজিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে। হোটেলে তারা স্বামী- স্ত্রীর পরিচয়ে রুম ভাড়া করেন।
শাহাবুদ্দিন বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, হাবিবা বেগম তাকে বেড়ানোর কথা বলে ঢাকায় আনে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা হোটেলে ওঠার কয়েক ঘণ্টা পর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের টিমের হাতে গ্রেফতার হন। ইয়াবা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
রোহিঙ্গা তরুণী হাবিবা বেগম নিজেকে টেকনাফের বাসিন্দা বলে দাবি করলেও সেলিনা আক্তার জানিয়েছেন তার প্রকৃত পরিচয়। তিনি বলেছেন, তিনি শাহবুদ্দিনকে ভালোবাসেন। বিয়ে করবেন বলে ঢাকায় এসেছিলেন।
অভিযান পরিচালনাকারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলাধীন রমনা সার্কেলের পরিদর্শক রাজু আহাম্মেদ চৌধুরী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন গ্রেফতারকৃতরা ২ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে হোটেলে উঠেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ফকিরাপুলস্থ আলিজা আবাসিক হোটেলের ৪০৮ নং রুমে অভিযান চালান। এ রুম থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেন হাবিব ও শাহাবুদ্দিনকে। কিন্তু তখন তারা জানতেন না যে, তাদের সঙ্গে মহিলা আছে। রুমের মধ্যে মহিলার কাপড়-চোপড় দেখে তাদের সন্দেহ হয়। এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সেলিনা আক্তার ও হাবিবা বেগমের কথা স্বীকার করে। পরে ৪০৯ নং রুম থেকে গ্রেফতার করা হয় হাবিবা বেগমকে। কিন্তু তিনজনকে গ্রেফতার করার পর হাবিবের মাধ্যমে সেলিনাকে কৌশনে হোটেলে ডেকে নিয়ে আসা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪শ পিস ইয়াবা। তিনি বলেন, হোটেলে ওঠার পর সেলিনা এক হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে বিক্রির জন্য যাত্রাবাড়ি এলাকায় যায়। ৬শ ইয়াবা বিক্রি করার পরই সে হোটেলে ফেরে। তবে যাত্রাবাড়িতে কাদের কাছে ৬শ ইয়াবা বিক্রি করেছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে সেলিনা জানিয়েছে, প্রতি পিস ইয়াবা সে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করেছে।
তিনি আরও বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলের রুম ভাড়া নিয়েছিল, যাতে কেউ কোন ধরনের সন্দেহ করতে না পারে। গ্রেফতারের পর তাদের জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে তাদের পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হবে।

Powered by Blogger.