বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী-এ মুহূর্তে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি বোধ হয় আমি

হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে জাতীয় সংসদ আবার উত্তপ্ত হলো আজ বৃহস্পতিবার সরকারি দলের সাংসদেরা বিষয়ে সরকার অর্থমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেছেন
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, জালিয়াতির সঙ্গে তাঁর মন্ত্রণালয় বা সরকার জড়িত নয় চার হাজার কোটি টাকা কিছুই নয় বক্তব্যের জন্য তিনি সংসদ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন
খুলনা উন্নয়ন ব্যাংকপ্রতিষ্ঠা-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে হলমার্কের বিষয়টি আলোচনায় আসে গতকাল বুধবারও হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়
সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ সালে সোনালী ব্যাংক হলমার্কের ব্যাপারে দুটি প্রতিবেদন দিয়েছিল এখন দেখা যাচ্ছে দুটি প্রতিবেদনই অসত্য ছিল প্রথমে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হলমার্ককে ৬৫ কোটি টাকা
ঋণ দেয় এর সুযোগে কর্মচারীদের যোগসাজশে তারা অনেক টাকা পাচার করে
অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে সোনালী ব্যাংক তদন্ত শুরু করে অনেক কিছু পায় একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও তদন্ত করে তারাও যথেষ্ট তথ্য পায় তারা সোনালী ব্যাংককে জানিয়ে দেয়, এর সঙ্গে কিছু দুষ্টলোক জড়িত এর পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংক ফাংশনাল অডিটের (কার্যক্রম নিরীক্ষা) হুকুম দেয় ১৩ জুলাই এর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় রীতি অনুযায়ী সেটা কখনো প্রকাশ করা হয় না এর উদ্দেশ্য হলো, প্রথমে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে স্বীকৃতি আদায় করা দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, স্বীকৃতি আদায় করে কী করে টাকা-পয়সা আদায় করা যায় এবং তাঁদের বলা, যে টাকা নিয়েছেন, তা ঋণ হিসেবে গণ্য করে তার জন্য জামানত জমা দেন কারণ জামানত থাকলে ঋণ আদায় হওয়ার সুযোগ থাকে তারপর মামলা-মোকদ্দমা বা দুদকে যাওয়া যাবে
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা হলো, বিষয়টি গোপন থাকেনি এতে ভালো-খারাপ দুটোই আছে আমার সাড়ে তিন বছরের অভিজ্ঞতা হলো, যথাযথ সাক্ষীর অভাবে মামলা চালানো যায় না জন্য দুদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এর কারণ হলো, দুদক এসব তদন্তের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ৬৫ কোটি টাকার ঋণ ছাড়া অন্য কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না সোনালী ব্যাংক অসত্য বিবরণ দিয়েছে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে ১৯ জনকে সাময়িক বরখাস্ত দুজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে
এর আগে দেওয়া একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চার হাজার কোটি টাকা তেমন কিছু না সেদিন আমার এই কথাটা বলা ঠিক হয়নি বলা হচ্ছে, এতে দুর্নীতিকে উত্সাহিত করা হচ্ছে জন্য আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন
এরপর আবদুল জলিল বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, চার হাজার কোটি টাকা কিছু না কত টাকা হলে কিছু হবে? অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দুই হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে তাহলে বাকি টাকার কী হবে?’ তিনি বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে বিবৃতি দাবি করেন
আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘এত বড় ঘটনার পর এখন পর্যন্ত কেন একজনও গ্রেপ্তার হলো না চার হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল, জাতি জানতে চায়
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ ঘটনার সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জড়িত এদের কেন অপসারণ করা হচ্ছে না, পর্ষদ রাখলে দায় সরকারের ওপর আসবে
অর্থমন্ত্রীর কাছে বিবৃতি দাবি করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ইতিহাস সবার জানা উচিত আগারগাঁওয়ের একটি মুদি দোকান থেকে তার উত্থান ব্যাংকের কেউ জড়িত না থাকলে সে এত দূর আসতে পারে না সরকার জড়িত আছে কি না, খুঁজে দেখা উচিত
সবশেষে অর্থমন্ত্রী আবার বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না ঘটনায় সরকারের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে আমি কোনো প্রমাণ পাইনি আমি বিশ্বাস করি, মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে জড়িত না তদন্ত চলছে, ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবেতিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত পরিচালনার জন্য পর্ষদ রাখা দরকার সেপ্টেম্বর পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ এমনিতেই শেষ হবে তখন ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি বোধ হয় আমি যাঁরা ঘৃণা করেন, তাঁদের ঘৃণার করার অধিকার আছে কারণ, এটা নিয়ে দেশে আলোড়ন চলছে তবে আমার ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ভালো, অর্থনীতিও ভালো দুর্জন সব জায়গাতেই থাকে, আমাদের এখানেও আছে তদন্তের স্বার্থে অপেক্ষা করেন, জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে সোনালী ব্যাংক মূল্যবান ব্যাংক, এখানে খেলাপি ঋণ কম তাই এটাকে রক্ষা করতে হবে

Powered by Blogger.