এসএসসি পাস করেননি হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর-গ্রামের মানুষ তাঁকে তফসির নামে চেনে


বাবা নুরুল ইসলাম ছিলেন গ্রামের সাধারণ কৃষক পরে শুরু করেন তৈজসপত্রের ব্যবসা একসময় ব্যবসায় যুক্ত হন বড় ছেলে সাফল্য আসে, খুচরা ব্যবসাটি রূপ নেয় পাইকারি ব্যবসায়
কিছুদিন পর বাবার ব্যবসা থেকে পুঁজি নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান বড় ছেলে ঢাকায় গিয়ে তৈরি পোশাক কারখানায় কাপড়ের কার্টন সরবরাহের কাজ নেন তিনি সেটি ১৯৯২ সালের কথা অল্প সময়ের মধ্যে বড় ব্যবসায়ী বনে যান বড় ছেলে এই বড় ছেলে হলেন হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ
গত শনিবার আশুগঞ্জ উপজেলার তারোয়া, তালশহর, আড়াইসিধা গ্রাম ঘুরে তানভীর সম্পর্কে কথা জানা যায় তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখত আল্লাহ ছেলের স্বপ্ন পূরণ করেছেসোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়টি তুললে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে কোনো অন্যায় করেননি
আগে তানভীর মাহমুদের পরিচিতি নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের তারোয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল গণমাধ্যমে হলমার্ক কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর এখন তিনি দেশ-বিদেশে আলোচিত
গ্রামে সংবাদপত্রের পাঠক খুব বেশি নেই কিন্তু ঘটনার পর থেকে অনেকের হাতে সংবাদপত্র স্থান করে নিয়েছে টিভি সংবাদেরও দর্শক বেড়েছে তারোয়া লাগোয়া আড়াইসিধা বাজারের আবদুল্লাহ মিয়ার হোটেলে ঢুকে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন দলগতভাবে দু-এক দিন আগের পত্রিকা পড়ছেন তানভীর মাহমুদ প্রসঙ্গ তুলতেই সবাই নড়েচড়ে বসেন গ্রামের মানুষ অবশ্য তাঁকে তফসির নামে চেনে
আড়াইসিধা গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, ‘তফসিররে দেখতাম মাথা নুওয়াইয়া আটত (হাঁটত) বাপের ব্যবসায় সাহায্য করত এই মানুষটা এত কম সময়ে কেমনে অত টেহার মালিক হইল ব্যাংক ওয়ালারে বেহুপ বানাইয়া কেমনে অত টেহা লইয়া গেলকথা কেড়ে নিয়ে তারোয়া গ্রামের হাবিব মিয়া বলেন, ‘টেহা তো আর জোর কইরা নিছে না সরকার দিছে বইলাই নিছেকপালে হাত রেখে তালশহর গ্রামের লোকমান মিয়া (৪৫) বলেন, ‘আশ্চার্য ব্যাপার, অত টেহা চাইলইবা কেমনে, দিলইবা কেমনে?’
গ্রামবাসী জানায়, তানভীর মাহমুদকে নিয়ে আগে এত আলোচনা ছিল না হঠাৎ দেখা গেল, বিশাল চাররঙা পোস্টার পোস্টার দেখে গ্রামবাসী জানতে পেরেছে, তানভীর বিজিএমইএ আয়োজিত ২২তম বাটেক্সপোতে পোশাকশিল্পের সেরা উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন এরপর ২০ জানুয়ারি সংবর্ধনার আয়োজন হয় সংবর্ধনার কার্ডে প্রধান অতিথি হিসেবে নাম ছাপা হয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য সমাজকল্যাণবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদ্দাচ্ছের আলী, বিশেষ অতিথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বি তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর নাম অনুষ্ঠানটি নিয়ে উপজেলা তারোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয় কারণ, দল সরকারের বড় কয়েকজন নেতা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা প্রচার করা হলেও আয়োজক পক্ষ দলের নেতাদের পাত্তা দেয়নি অবশ্য স্থানীয় ক্ষোভের কথা জেনে প্রতিমন্ত্রী সাংসদ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি তারোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লাল মিয়া মাস্টার বলেন, ‘অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের সঙ্গে কেউ আলোচনা করেননি দাওয়াত পেলেও দলীয় নেতা-কর্মীরা মূল্যায়ন পাননি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে গ্রামবাসীর রয়েছে ভিন্ন রকম অনুভূতিমুদি ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন বলেন, ‘হেই দিন গাড়ির মিছিল হইছিল এত গাড়ির চাপে রাস্তার অবস্থা বারোটা বাইজা গেছিল
গত শনিবার ( সেপ্টেম্বর) বেলা তিনটার দিকে তারোয়ায় তানভীরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে তাঁর বাবাসহ নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে গত শুক্রবার ছিল তানভীরের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী জন্য বিশাল আয়োজন দেখা গেল, খাওয়ানো হয় হাজার হাজার মানুষকে অনুষ্ঠান শেষে চারটি ছোট ট্রাকে করে বড় বড় ডেকচি তোলা হচ্ছিল
তানভীরের দোতলা বিলাসবহুল বাড়িটি তৈরি করা হয় পাঁচ বছর আগে বাড়িতে বাবা ছাড়া আর কেউ থাকেন না বাবা নুরুল ইসলাম জানান, দুই ছেলের মধ্যে তফসির (তানভীর) বড় আরেক ছেলে মাহবুবুল আলম হলমার্ক গ্রুপের পরিচালক তিন মেয়ে শিউলী, পারুল নাসরিনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে তানভীর তারোয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক তালশহর এএআই উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন বলে দাবি করেন তাঁর বাবা তবে গ্রামের লোকজন জানান, তিনি এসএসসি পাস করেননি

Powered by Blogger.