শাশুড়ি এবংশালিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কই কাল হলো বিএনপি নেতা রফিকুলের

শাশুড়ি লিপি আক্তারের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কই কাল হলো বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারের। পাঁচ বছর ধরে লিপির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির এ নেতার।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে লিপি আক্তার জানিয়েছে, তার ছোট মেয়ের স্বামী রফিকুল
অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে রফিকুল। শাশুড়ি বাধা দিলে রফিকুল মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এভাবে রফিকুলের সঙ্গে লিপির পাঁচ বছর সম্পর্ক চলতে থাকে। তবে শারীরিক এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি লিপি আক্তার। এ কারণে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ভারাটে লোক দিয়ে রফিকুলকে হত্যা করেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে লিপি আক্তার আরো জানিয়েছেন, পাঁচ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রিনা খাতুনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় লিপি আক্তারের ছোট মেয়ে আয়েশা সিদ্দীকা ঝরাকে বিয়ে করে রফিকুল। কিন্তু রফিকুল তার শাশুড়ি লিপির দিকে নজর দেন। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

লিপি আক্তার র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন, জামাতা রফিকুল একপর্যায়ে তার আরেক মেয়ে স্নিগ্ধার সঙ্গেও জোর করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে জামাতা রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন লিপি। এ জন্য তিনি দুই লাখ টাকা দিয়ে আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান, খেলাফত, শিমুল, সোহেল রানা, মধু ওরফে মন্টু ও তোতাকে ভাড়া করেন। এ পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়।

রফিকুল ইসলামকে খুনের সাত মাস পর তার শাশুড়িসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে বুধবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা বুধবার রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব সদর দফতরে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রফিকুলের শাশুড়ি লিপি আক্তার, ভাড়াটে খুনি আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান ও মিজানুর রহমান মন্টু। ফজলুর রহমান একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য এবং তিনি র‌্যাবেও কাজ করেছেন।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ইউং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, লিপি আক্তার জিজ্ঞাসাবাদে লোক ভাড়া করে রফিকুলকে খুন করানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। হত্যার জন্য মূলত মহব্বতের সঙ্গেই অর্থ লেনদেন হয় বলেও র‌্যাবকে জানিয়েছেন লিপি।

গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের শলৈকুপা থেকে অপহৃত হন ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজুমদার। ওই রাতেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় তার হাতকড়া পরা লাশ পাওয়া যায়। হাতকড়ায় র‌্যাব লেখা ছিল। এঘটনায় গুজব ছড়ানো হয় যে র‌্যাবই তাকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কনর্লে জিয়াউল আহসান ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রফিকুল খুনের পর র‌্যাবের গোয়েন্দা দল বিভিন্নভাবে দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করে। র‌্যাব বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে রফিকের শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শলৈকুপা এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকায় বিভিন্নভাবে তথ্যসংগ্রহ করতে থাকে। খুনের ঘটনায় বিশেষ করে রফিকের শাশুড়ির (লিপি আক্তার) ওপর বিশেষ নজরদারি ও তার গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন ধাপে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রফিকের শাশুড়ির কিছুটা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। একপর্যায়ে দেশে বিদ্যমান প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে র‌্যাব জানতে পারে, রফিকের শাশুড়িই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী। এরপর প্রযুক্তিগত ও নানা কৌশলে তদন্ত চালিয়ে রফিকুল ইসলামের শাশুড়িসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়

,
Powered by Blogger.