সাভারে আবাসিক বাড়িতে যৌন উত্তেজক পানীয় কারখানা

সাভারে আবাসিক বাড়ির ভেতরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ নকল কারখানা। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে আবাসিক বাড়ির ভেতরে এসব নকল কারখানা গড়ে উঠার করণে প্রতিনিয়িতই শব্দ দূষণ ও
বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বেড়ে উঠা নবজাতক শিশুর মানষিক বিকাশসহ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় জনতা।স্থানীয় প্রশাষনের সাথে সখ্যতা করে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন সার্টিফিকেট না নিয়েই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সাভারের আবাসিক বাড়িগুলোতে গড়ে তুলছে অবৈধ নকল কারখানা।
অবৈধ এসব নকল কারখানার মধ্যে রয়েছে, ইলিকট্রসিক্স পন্য ফিলিপস এর নকল ব্লাস্টার কারখানা, প্রসাধনী সামগ্রী, ওষুধ কারখানা, লাবাং, নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক তরল পানীয়সহ একাধীক নকল কারখানা।
তবে এসব নকল কারখানাগুলোর কোন অনুমোদন না থাকলেও সাভার পৌরসভা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারমেনের কাছ থেকে তারা খুব সহজেই ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
স্থানীয় কমিশনার, ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশের সহযোগীতায় রাতারাতিভাবে গড়ে উঠা নকল কারখানাগুলোর উৎপদিত পন্য স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতে।
সাভার পৌর এলাকার ছায়াবিথী মহল্লার ফারুক খানের বাড়িতে দুই বছর যাবৎ চালু করা হয়েছে ইলেকট্রসিক্স এর নকল ব্লাষ্টার ও রং এর কারখানা। তবে এ নকল ব্লাষ্টারটি ফিলিপস কোম্পানীর নামকরণ করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক ফারুকের কাছে যোগাযোগ করা হলে তিনি কারখানার কোন অনুমোদন নেই বলে স্বীকার করেন ও ব্লাস্টারগুলো ফিলিপস কোম্পানীর নামে বাজারজাতকরা হয় বলে জানান।
এদিকে আবাসিক মহল্লায় নকল কারখানা গড়ে তোলার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ টুটুল অভিযোগ করে বলেন, বাসাভাড়িতে অবৈধভাবে নকল কারখানা গড়ে তোলায় প্রতিনিয়তই শব্দ ও বায়ু দুষণের হয়। ফলে তার নবজাতক ১২ ঘণ্টার একটি শিশুকে বাড়িতে নিয়ে আসার কয়েক ঘণ্টার পরই সে মারা যায়। ওই কারখানায় বিষাক্ত ক্যামিকেল ব্যবহার করে রং তৈরী করা হচ্ছিল। এ সময় অতিরিক্ত শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে তার নবজাতক শিশুটি মৃত্যুবরণ করে বলে তিনি জানায়।
এছাড়াও একই এলাকায় হংকং বিউটি কর্ণার নামক একটি নকল প্রসাধনী কারখানা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় বাবু নামের এক প্রসাধনী ব্যবসায়ী। তার অবৈধ এ কারখানায় বিভিন্ন ধরণের নকল প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন করে বাজারের বিভিন্ন নামী ব্রান্ডগুলোর মোড়ক ব্যবহার করে সেগুলো খুচরা বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
ফলে স্বল্প মূল্যে ত্বক ফর্সকারী বিভিন্ন নকল ক্রিম ব্যবহার করে প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সৌন্দর্য প্রিয় নারীরা।
এছাড়াও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক তরল পানীয় তৈরীর কারখানা। এদের মধ্যে রয়েছে সাভারের হেমায়েতপুরের নিশিপাড়া এলাকায় আব্দুর রশিদের মালিকানাধীন জিনিয়াল ল্যবরেটরিজ, সাভারের রেডিও কলোনী সোসাইটি গেট সংলগ্ন ভাটপাড়া এলাকায় ওয়াসীমের মালিকানাধীন জিনিসিন ফ্যাক্টরী, আশুলিয়ার বগাবাড়ী এলাকার জুয়েলের মালিকানাধীন হর্স ফিলিংস ফ্যাক্টরী, সাভার পৌর এলাকার আইচানোয়াদ্দা মহল্লার টিউলিব উইনানী, নামা গেন্ডা এলাকার জিনি ল্যাবটরিজ লি:, আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকার র‌্যাব-৪এর ক্যাম্প এর পিছনে বীবন চৌধুরীরর মালিখানাধীন জিনি ল্যাবটরিজ লি:সহ প্রায় ১৫টি কারখানা রয়েছে সাভারের বিভিন্ন এলাকায়। তবে এসব অবৈধ কারখানাগুলো প্রশাষনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার সিলগালা, জরিমানা ও কারখানার কর্মকর্তাদের আটক করে তাদের জেল দেয়া হলেও অল্প কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা হয়।
তবে থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাষনকে মাসিক মাসোহারা দিয়েই এসব কারখানাগুলো চালানো হয় বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
অবৈধ এসব কারখানাগুলোতে উৎপাদন করা হচ্ছে, নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক পানীয় জিনিসিন, নকল জুস, হর্স পাওয়ার, দুই ঘোরা জিনিসিন, জিনসিন প্লাস সহ বিভিন্ন যৌন উত্তেজক তরল পানীয়, ওষুধ ও নিষিদ্ধ তেল। পরে উৎপাদিত যৌন উত্তেজক তরল পানীয়গুলো বোতল জাত করে খুচরা বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
আর খুব সহজেই হাতের নাগালে পাওয়ায় এসব নকল জিনসিন ও জুস পান করছে যুবকরা। ফলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে তাদের যৌন উত্তেজনা ক্ষমতা।
হোময়েতপুর এলাকার জিনি ল্যাবরেটরিজ নামক যৌন উত্তেজক কারখানাটি বেশ কয়েকবছর আগে চালু হওয়ার পর ভ্রাম্যমান আদালত ওই প্রতিষ্ঠানটি তিন বার সিলগালা ও জরিমানা করে। পরে প্রশাষনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাতের সাথে সখ্যতা করে করাখানাটি আবারও চালু করেছে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে কারখানার মালিক আব্দুর রশিদ জানান, প্রশাষনকে ম্যানেজ করেই আমরা যৌন উত্তেজক তরল পানীয় তৈরী করছি। এছাড়াও কারখানার পক্ষ থেকে থানা পুলিশকে মাসিক মাসোহার দেয়া হয় বলে তিনি জানান।
আশুলিয়ার বগাবাড়ি এলাকার হর্স কারখানার মালিক জুয়েল জানান, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বদরুল আলমকে মাসিক মাসোহাড়া দিয়েই তিনি দুই বছর যাবৎ হর্স ফিলিংসের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
অপরদিকে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে তৈরী করা হচ্ছে গরু মোটাতাজাকরণের ভিটামিন ওষুধসহ পশু ও হাসমুরগীর বিভিন্ন নকল ওষুধ।
সকল এসব ওষুধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার মাইশা ফার্মা, ডগরমোড়া এলাকার কৃষান এগ্রো ফুড ও কেসিসি বাংলাদেশ, গেন্ডা এলাকার কনফিডেন্স ফার্মা, সাভারের হেমায়েতপুরের জয়নাবড়ি এলাকার মেসার্স এম এস এগ্রো ফুড, একই এলাকার জিডি এস এগ্রো, আশুলিয়ার দুর্গাপুর এলাকার এডভান্স এগ্রো, ব্যাংক টাউন এলাকার মেটরেড ইন্টারন্যাশনাল লি:সহ প্রায় ২০টি নকল কারখানা রয়েছে সাভারে বিভিন্ন এলাকায়।
বিভিন্ন বিদেশী ওষুধের মোড়ক ব্যবহার করে ভিটামিনসহ গরু মোটাতাজাকরণের ওষুধ ও গৃহপালিত বিভিন্ন পশু, প্রাণীর এন্টিবায়োটিক নকল ওষুধ উৎপাদন করে থাকে এসব প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও সাভারের রেডিও কলোনী এলাকায় নিউ রাজধানী লাবাং ও রাজধানী লাবাংসহ একাধীক লাবাং কারখানা রয়েছে। পরিবেশ বা বিএসটিএর অনুমোধন ছাড়াই নোংরা পরিবেশে তৈরী করা হচ্ছে লাবাং। পরে সেগুলোকে বোতলজাত করে স্থানীয় দোকানীদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব ব্যাপারে লাবাং কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তৈরীতে কোন অনুমোদন প্রয়োজন হয়না বলে জানান। এছাড়া আমরা স্থানীয় প্রশাষনকে ম্যনেজ করেই কারখানা চালিয়ে আসছি বলে তারা জানান।
তবে এসব নকল কারখানার মধ্যে পিছিয়ে নেই ডিটারজেন ও সাবান তৈরীও। সাভারের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে একাধিক ডিটারজেন ও সাবান তৈরীর কারখানা। সাভারের রাজাশন এলাকায় দরেন্ডাস্কুল সংলগ্ন এলাকায় একটি আবাসিক বাড়িতে সেলীমের মালিকানাধীন হোয়েল ডিটারজেন ফ্যাক্টরী। পৌর এলাকার পাকিজা মহল্লায় নকল নিম সাবান ফ্যাক্টরী ছাড়াও রয়েছে সাভারের একাধিক বাসাবাড়িতে ডিটারজেন ও সাবানের কারখানা।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খুব শিঘ্রই এসব নকল কারখানায় অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

,
Powered by Blogger.