‘খালেদার জন্ম চা বাগানে, তার পিতা ইহুদি’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা নিজেদের সময়কার সরকারের সাফল্যের
গুণকীর্তন করেন। সে সাথে দু’দিক থেকে প্রয়াত জাতীয় নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়। বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার পিতৃ পরিচয় ও তার দ্বিতীয় ছেলে আরাফাত রহমান কোকো সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার পর বিরোধী দল রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে ওয়াকআউট করে।
সরকার দলীয় সদস্য অপু উকিল বলেন, বাজেট নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিরোধী দলের সদস্যদের অসত্য কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলতে হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কিভাবে ভোট কেড়ে নিয়েছে সেসব কথা বইয়ে লেখা রয়েছে। বইয়ে লেখা রয়েছে স্বৈরাচারের সময়কার নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কথা। অনুগ্রহ পূর্বক বইটি পড়বেন তাহলে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইবেন না।
তিনি বলেন, ‘একটি বইয়ের মধ্যে লেখা রয়েছে ভারতের দার্জিলিং চা বাগানে লক্ষ্মীরানী নিজের নাম পরিবর্তন করে তৈয়বা নামে চাকরি নেন। খালেদার জন্ম হয় চা বাগানে এবং তার পিতা একজন ইহুদি। এদিকে ১৯৭১ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন খালেদা জিয়া। পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খান জানজোয়ারের সাথে পরীকায় মেতে উঠেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে পাকিস্তানি সেই সেনা কর্মকর্তা খান জানজোয়ারের সাথে কোকোর চেহারার মিল রয়েছে।’ এসব কথা বলার সময় বিরোধী দলের সদস্যরা একযোগে দাঁড়িয়ে স্পিকারের কাছে প্রতিকার চান। বিরোধী দলীয় ভারপ্রাপ্ত চিফ হুইপ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপনি অপু উকিলের মাইক বন্ধ না করলে আমরা ওয়াকআউট করতে বাধ্য হবো।’ এ সময় ডেপুটি স্পিকার ছিলেন প্রায় নির্বিকার। তিনি কয়েকবার মাইকে অপু উকিলকে বাজেটের উপর বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান। কিন্তু অপু উকিল স্পিকারের আহ্বানের পরও বিরোধী দলের নেতা ও তার পরিবারের প্রতি অশালীন কথা বলা অব্যাহত রাখলে বিরোধী দলের সদস্যরা ‘হরেকৃষ্ণ হরেরাম’ শ্লোগান দিয়ে ওয়াকআউট করেন।
এরআগে বিএনপির বেগম নিলোফার চৌধুরী মনি বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘বলা হয়েছে বিরোধী দলীয় নেতা নাকি দুপুরে ঘুম থেকে উঠেন। কেন এ ধরনের মিথ্যাচার করা হচ্ছে? খালেদা জিয়া ১০ দিনের তারাবিহর নামাজে কোরআন খতম দেন। তাহজুদ নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করেন।’ তিনি বলেন, বিরোধী দলকে দমন করতে সরকার গায়ের জোরে সন্ত্রাস দমন আইন পাস করেছে। আমরা চাই না বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্র হোক। সংবিধানের ৫৭ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের কোন শেষ নেই। বছরের পর বছর ঢাকা সিটি করপোরেশনের মতো জাতীয় নির্বাচনকে ঝুলিয়ে রেখে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুম হয়ে যায় বিএনপির নেতা এম ইলিয়াছ আলী।
তিনি বলেন, আসিতেছে শুভ দিন। শোধ করতে হবে ঋণ। একটি পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আজীবন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ এ সরকারের সাড়ে চার বছরের আমলনামার রায় দিয়েছে। বাজেটকে আমি বলবো থোক বরাদ্দ ও লুটপাটের বাজেট। ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে টোঙ্গা করে বাজার করছে। তিনি অর্থমন্ত্রীকে ‘ক্লাউন’, তথ্যমন্ত্রীকে ‘ভাড়াটে মন্ত্রী’ এবং দফতরবিহীন মন্ত্রীকে ‘কালো বিড়াল’ বলে কটূক্তি করেন। তিনজন মন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্যের পাশাপাশি ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণকে হেয় করে প্যারোডি বানিয়ে বক্তব্য রাখার সময় সরকারি দলের সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এরপরও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার বন্ধ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান আগামীর রাষ্ট্র নায়ক হবেন; এ জন্যই সরকারের মাথায় বাজ পড়েছে। বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে আপনারা ভালোয় ভালোয় বিদায় হোন। আমাদের সাথে যে ব্যবহার করেছেন আপনাদের সাথে সে ব্যবহার করবো না।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে বিএনপির মোসাম্মত্ শাম্মী আক্তার বক্তব্য রাখার সময় অশালীন, অসংসদীয় ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেন। গতকাল রাতে সে ধারাবাহিকতায় সংসদ উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং বিরোধী দলের ওয়াকআউটের মত ঘটনা ঘটে।
আরও বক্তব্য রাখেন নূরুল ইসলাম সুজন, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, তানভীর শাকিল জয়, জাতীয় পার্টির (জাপা) গোলাম কিবরিয়া টিপু।

Powered by Blogger.