খাবারের মেনুতে মহিলা প্রধানমন্ত্রীর দেহাংশ বাদ যায়নি স্তন ও ঊরু !

হেনস্থা, অপমান, লাঞ্ছনার এ যেন এক নতুন মঞ্চ। রাজনীতিরকারবারিরা কত নীচে নামতে পারেন তার নমুনা পাওয়া গেল
অস্ট্রেলিয়ায়। জানা গেল, ক্যাঙারুদের মুলুকেও পুরুষতন্ত্রের নির্লজ্জ দাপট আছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের নামে একটি খাবারের পদ তৈরি হয়েছে। যার নাম “জুলিয়া গিলার্ড কেন্টাকি ফ্রায়েড কুয়্যেল: স্মল ব্রেস্ট, হিউজ থাইস্ অ্যান্ড আ বিগ রেড বক্স”।
খবরে প্রকাশ, রোগা ছিপিছিপে চেহারার শ্বেতাঙ্গ অসি মহিলা প্রধানমন্ত্রীর চেহারাকে ব্যঙ্গ করেই ‘ছোট স্তন’ এবং ‘বড় থাই বা ঊরু’ দিয়ে খাবারের নামকরণ করেছেন বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর যোনিকে ব্যঙ্গ করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিগ রেড বক্স’! এই বিকৃত ও অদ্ভুত নামকরণে সরাসরি অসি প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক গঠনকেই তীব্র ব্যঙ্গ করা হয়েছে। বিতর্কের ঝড় ওঠায় আজ বুধবার অস্ট্রেলিয়ার একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক প্রার্থী এই ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।
চলতি বছরের মার্চ মাসে এই পদটি কোনও একটি হাইপ্রোফাইল অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। ট্যুইটারে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে নিন্দে, সমালোচনা। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন সরকারি মন্ত্রী, বর্তমানে বিরোধী দল লিবার‌্যাল ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী ম্যাল ব্রউ জানিয়েছেন, “যিনি এই কাজ করেছেন তিনি আমাদের দলীয় সমর্থক নন। তবে হয়ত তিনি ভেবেছিলেন এটা করে ‘মজা’ পাওয়া যাবে।” ম্যালের দাবি, ওই বিশেষ পদটির নাম তিনি অনুমোদন করেননি। এমনকী তিনি কখনও ওই পদ চেখেও দেখেননি। তবে গোটা ঘটনায় তিনি গভীরভাবে দুঃখপ্রকাশ করছেন। মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করে এরকম নামকরণ যে উচিত হয়নি তাও কবুল করেছেন বিরোধী দলের প্রার্থী ব্রউ। অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রউ জানিয়েছেন, আমি গভীরভাবে দুঃখিত ও ক্ষমা চাইছি। গত সেপ্টেম্বরে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে দলীয় তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে একটি পার্টি দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই কোয়েল পাখির মাংসের এই নতুন পদের নামকরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ছিপছিপে দড়ি পাকানো চেহারার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের চেহারার গঠন নিয়ে তাঁর চেহারার সঙ্গে সুস্বাদু কোয়েল পাখির মাংসের ও শারীরিক গঠনের তুলনা করায় বিরোধী ন্যাশনাল লেবার পার্টি এখন গোটা দেশে তোপের মুখে। উঠেছে বিতর্ক। তবে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানি জুলিয়া। হয়তো তাঁর রুচিতে বেধেছে।
প্রসঙ্গত, দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী জুলিয়াকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেই দেশের জন্য কাজ করতে হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পুনর্নিবার্চিত হলে দেশের প্রান্তিক তথা পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য কাজ করবেন। এমনকী ‘উওম্যান ফর গিলার্ড’ নামে একটি লেবার পার্টি গঠনের পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। তিনি বলেছিলেন,”আমরা এমন একটা দেশে থাকতে চাই না, যেখানে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত পুরুষদের রাজনীতির খেলা। কারণ পুরুষরা মনে করেন তাঁরা এই বিষয়টা ভাল বোঝেন।” বিরোধীরা একে এক উদ্ধত প্রধানমন্ত্রীর নিষ্ঠুর রাজনৈতিক বার্তা হিসাবে ব্যাখ্যা করে জুলিয়ার ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। যদিও অনমনীয় জুলিয়া ক্ষমা চাননি। এই ঘটনায় জুলিয়ার সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন জার্মানির মহিলা চ্যান্সেলার তথা রাষ্ট্রপ্রধান অ্যাঞ্জেলা মর্কেল। এই পরিস্থিতিতে জুলিয়াকে নিয়ে যে এ ধরণের অপমানজনক ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে আশ্চর্য হননি অনেকেই। তবে অস্ট্রেলিয়ার সব রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।

, ,
Powered by Blogger.