কুষ্টিয়া আড়ুয়াপাড়ার ব্যাংকের পেছনে পান্না মাস্টারের প্রমোদ মহল

কুষ্টিয়ার ‘রাসপুটিন’ হেলাল উদ্দিন পান্না শুধু মেয়েদেরই পড়াতো। তার টিউশন হাউজে ছেলেদের কোন স্থান ছিল না। পান্নার লালসা থেকে রেহাই পায়নি তার সহকর্মীর মেয়েও। তার নিজ গ্রাম হরিপুরবাসী বলছে, তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এখন দাবি
উঠেছে তাদের সামাজিকভাবে বয়কটের। সরজমিন অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বারখাদা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আগে থেকেই লাম্পট্য শুরু করে হেলাল উদ্দিন পান্না। গণিতের শিক্ষক হওয়ার কারণে মেয়েরা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতো। আর এ সুযোগটি নিয়েছিল সে। তবে এ স্কুলে পড়ানো শুরুর পর থেকেই পান্নার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলেও আদর্শ স্কুলের শিক্ষকরা ছিলেন নীরব। অনুসন্ধানে জানা যায়, আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদানের পরপরই হেলাল উদ্দিন পান্না জুগিয়া পালপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে শুরু করে প্রাইভেট পড়ানো। সেখানে ওই বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষিকার মেয়ে পড়তে গেলে পান্নার দৃষ্টি পড়ে তার ওপর। প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েটিকে। পরে এলাকার লোকজনের চাপে ওই বাসা ছেড়ে দেয় পান্না। এরপর বাসা ভাড়া নেয় জুগিয়া দরগাপাড়ায়। আবারও শুরু হয় প্রাইভেট পড়ানো। শুরু হয় প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন। এক পর্যায়ে বিষয়টি এলাকাবাসী টের পেয়ে বিতাড়িত করে তাকে। এবার পান্না একটি রুম ভাড়া নেয় আদর্শ বিদ্যালয়ের পেছনের দিকে জনৈক হীরার বাড়িতে। এখানেও এসে প্রতীতি বিদ্যালয়ের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। মেয়েটির আত্মীয়স্বজন বিষয়টি টের পেয়ে গণধোলাই দেয়। প্রকাশ হয়ে পড়ে পান্নার সেক্স ভিডিও’র ছবি।
বারখাদা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া এক ছাত্রী জানায়, আমি অল্পদিন ওই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েছি। সে ছেলেদের প্রাইভেট পড়ায় না। শুধু মেয়েদের পড়ায়। প্রাইভেট পড়ানো অবস্থায় শরীরে হাত দিতো। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্নো গল্পের বই (চটিগল্প) বই ও খাতার মধ্যে গুঁজে দিতো। বই পাওয়ার পরের দিন পড়তে গেলে ওই শিক্ষক এসব গল্প নিয়ে আলোচনা করতো আর গায়ে হাত দিতো। একপর্যায়ে সে ফ্রি হয়ে গেলে প্রেমের সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। পরে গোপন ক্যামেরায় তোলা ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতো। মেয়েটির দাবি, তার এক বান্ধবীর সঙ্গে এভাবে সম্পর্ক তৈরি হলে সে কিছু দিন পরেই প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দেয়।
অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, কোন মেয়েকে পান্না টার্গেট করলে প্রথমে তাকে মেধাবী বলে খুব উৎসাহ দিতো। এরপর তার লেখাপড়ার খোঁজখবর নেয়ার নামে তার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক করতো। একটু ভাল সম্পর্ক হলেই প্রেমের প্রস্তাব দিতো। একপর্যায়ে মেয়েটির বই বা খাতার মধ্যে দিয়ে দিতো চটিগল্পের বই। এভাবে মেয়েটি চটিগল্পের বইটি পড়লে ওই শিক্ষক তার সঙ্গে সেক্সুয়াল আলোচনা করে ফ্রি করে নিতো। এরপর মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হতো শহরের আড়ুয়াপাড়ার সোনালী ব্যাংকের পেছনের একটি ভাড়া করা প্রমোদ মহলে। সেখানে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের নগ্ন ভিডিও ধারণ করা হতো। পরে নগ্ন ভিডিও দেখিয়ে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে মেলামেশা করতে বাধ্য করা হতো। প্রতারণার শিকার বুঝতে পেরেও অনেকেই ভিডিও থাকার কারণে মুখ খুলতে পারেনি। তারা বাধ্য হয়েছে শিক্ষক নামের ওই পিশাচের সঙ্গে সেক্স করতে। এমনকি তার বন্ধুদের সঙ্গেও সেক্স করতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে বিবাহিত ও ২০০৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ভুক্তভোগী জানান, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে। আজেবাজে বই পড়তে দিতো। ওই বিদ্যালয় থেকে কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ওই শিক্ষকের ভাড়া করা বাসায় গিয়ে তার সর্বনাশ হয় বলে দাবি তার। বর্তমানে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রের নার্সের দায়িত্ব পালনকারী ওই বিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রী বলেন, শিক্ষক-ছাত্রী সম্পর্ক পিতা ও সন্তানের সম্পর্কের মতোই পবিত্র। কিন্তু এ শিক্ষক তা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। তার এক বান্ধবীর ঘটনা বর্ণনায় মেয়েটি বলে, পান্নার কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতো আমার এক বান্ধবী। স্কুলের পাশেই ছিল ওই প্রাইভেট পড়ানোর বাসা। একপর্যায়ে আমার বান্ধবী তার সম্ভ্রম হারানোর কথা জানায়। আরও ছাত্রী দাবি করেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং সে সময় অঙ্ক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখি আমি ফেল করেছি। খাতা চ্যালেঞ্জ করলে আমি ৬০ পেয়েছিলাম। এ রকম নানা অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। পান্নার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তার বন্ধু কুষ্টিয়ার নামী পরিবহন ব্যবসায়ীর জামাতা গাংনী এলজিডিইতে কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ারের সেক্স ভিডিও পান্নার ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার হয়েছে।
এর আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুন রাজীব এ ঘটনাটিকে সরাসরি ফৌজদারি বিধানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে স্বীকার করলেও আজও পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ কর্তৃক মামলাসহ যথাযথ আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠছে। এ বিষয়ে এডভোকেট শামিম-উল হাসান অপু বলেন, কোন দুর্বৃত্ত বা অপরাধী কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের ফলে নাগরিক জীবনে কোন এক বা একাধিক বা কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সংক্ষুব্ধ হওয়ার প্রতীয়মানযোগ্য দৃষ্টান্ত থাকে এবং সংক্ষুব্ধ পক্ষগণ থেকে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলেও সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে পাবলিক সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিজ উদ্যোগেই আইনি পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার ফলে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষক পান্নাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তও নিয়েছে অথচ এখনও এ শিক্ষককে গ্রেপ্তারে পুলিশের পক্ষ থেকে কেন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি তা বোধগম্য নয়।
অন্যদিকে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ওই বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক ওবাইদুল ইসলাম বলেন, তদন্তে উদ্ঘাটিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে ৭ দিন। এ জঘন্য অপরাধের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেটাই করা হবে তদন্ত কমিটির সুপারিশে
আগের সংবাদ
>>পান্নার তার শিক্ষকতা জীবনে শতাধিক ছাত্রী সহ ১৩০-১৪০ জনের সঙ্গে সেক্স করেছে!

>>নারী নিয়ে আমোদ-প্রমোদ করার সময় পুলিশের হাতে আটক হলো পুলিশর এক কর্মকর্তা

>>পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জাপটে ধরে গর্ভবতী গৃহবধূ ও তার শাশুড়ীকে গণধর্ষণ: ইজ্জতের মূল্যদশ হাজার টাকা

,
Powered by Blogger.