ঢাবিতে ছাত্রদলকর্মীদের পেটালো ছাত্রলীগ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি
ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় ছাত্রদলের নতুন কমিটির ঢাবি উপাচার্যের
সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি থাকলেও ছাত্রলীগ কর্মীদের মারমুখী আচরণের কারণে
ছাত্রদলের কেউ ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেশ কয়েকজন ছাত্রদল কর্মীর উপর
হামলা চালায়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সোমবার দুপুর ২টার পরে ঢাবি
উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রদলের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতাদের
দেখা করার খবর পেয়ে ছাত্রলীগের শত শত কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন
সংলগ্ন মল চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। দুপুরে
ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী প্রশাসনিক ভবনের সামনে এলে তাদের ওপর হামলা চালায়
ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় তারা আব্বাস আলী, সোহাগ, মহসীন ও অজ্ঞাত আরেকজনকে
মারধর করেন। আহত আব্বাস ও সোহাগ স্যার সলিমুল্লাহ হল এবং রাশেদ সার্জেন্ট
জহুরুল হক হলের ছাত্র। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়েছে। হামলায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল
শাখার নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা
ইনস্টিটিউটের ১৮তম ব্যাচ ১ম বর্ষের জাহিদ ও পুনম নামে দুজন সাধারণ ছাত্রও
আহত হয়। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি মাহিদুল
হাসান হিরু বলেন, আমাদের ২টার পরে উপাচার্যের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা
করার কথা ছিল। বিষয়টি দেখার জন্য প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমাদের কয়েকজন
কর্মী গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের মারধর করেছেন।
আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। যে উপাচার্য ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে
পারে না তার উপাচার্যের পদে থাকার কোন অধিকার নেই। আমরা হামলাকারীদের
গ্রেফতার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যের সাথে দেখা করবো না। হামলার
বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা
বলেন, ছাত্রলীগের কেউ এ হামলার সাথে জড়িত নয়। কোন বহিরাগত যেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ করতে না পারে সেজন্য সাধারণ ছাত্ররা
তাদের প্রতিহত করেছে। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
বলেন, আমি সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতাদের দেখা করার সময়
দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আসেনি। সাক্ষাতের জন্য পরবর্তীতে সময় চাওয়া হলে সময়
দেয়া হবে বলে জানান তিনি। ছাত্রদল কর্মীদের হামলার বিষয়ে উপাচার্য বলেন,
ছাত্রদল কর্মীদের উপর হামলার কোন ঘটনা আমার জানা নেই। যাদের উপর হামলা করা
হয়েছে তারা বহিরাগত ছিল। উল্লেখ্য, ছাত্রদলের আগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের
পরপরই নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন, যাতে
ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মাথা ফেটে যায়। ঢাবির
২৫০ জন শিক্ষকের বিবৃতি : ছাত্রদল কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে
বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা
অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সদরুল আমীন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা বলেন, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে পূর্বনির্ধারিত সময়ে দেশের একটি বৃহৎ
ছাত্র সংগঠনের নেত্রীবৃন্দের সাক্ষাৎ করতে আসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ও প্রশাসনিক ভবনে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেশ
কয়েকজন ছাত্রের উপর যে হামলা করা হয়েছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে
আমরা উদ্বেগ, ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করছি। আমরা এ জঘন্য সন্ত্রাসী কর্মকা ে
জড়িত দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমরা চাই
ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং শিক্ষার সুষ্ঠু
পরিবেশ। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি
জানাচ্ছি।


