লাদেন হত্যার মর্মান্তিক কাহিনি!
পাকিস্তানের
অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নৌ কমান্ডোদের অভিযানে
আল কায়েদা নেতা ওসামা
বিন লাদেন নিহত হওয়ার
পর তার কক্ষে কোন
গুলি পওয়া যায়নি।
শয়ন কক্ষের দরজার ওপর
দুটি বন্দুক পাওয়া গেলেও
সেগুলো খালি ছিল।
এমনকি তিনি আত্মরক্ষার কোন
চেষ্টাও করেননি। নিরস্ত্র
লাদেন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তার
ক্ষতস্থান দিয়ে প্রচুর রক্ত
ঝরছিল। রক্তে
তার মুখমন্ডল ভেসে গিয়েছিল।
এ সময় অভিযানকারী মার্কিন
নৌ কমান্ডো দলের সদস্য মিট
বিসোনেট একটি কম্বল দিয়ে
তার মুখের রক্ত মুছে
দেন। এরপর তিনি লাদেনের
বেশ কয়েকটি ছবি তোলেন।যুক্তরাষ্ট্রের
সাবেক নেভি সিল মিট
বিসোনেট আল কায়েদা নেতার
বিরুদ্ধে পরিচালিত মার্কিন অভিযান নিয়ে লেখা
তার ‘
নো ইজি ডে’
বইতে এসব কথা বলেন। তিনি
লিখেছেন,
লাদেন মার্কিন কমান্ডোদের
গুলিতে তার শয়নকক্ষে নিহত
হন। আল
কায়েদা নেতা সত্যিই যে
নিহত হয়েছেন তার প্রমাণ
দিতে তিনি তার বেশ
কয়েকটি ছবি তুলে রাখেন। মিট
বিসোনেট বলেন, ‘
আমি লাদেনের
বিছানার একটি কম্বল দিয়ে
তার মুখের রক্ত মুছে
দেয়া শুরু করি।
এতে ক্রমেই তার চেহারা
স্পষ্ট হতে থাকে।
এ সময় আমার ধারণার
চেয়েও তাকে তরুণ দেখাচ্ছিল।’
তবে
তার দাঁড়ি অনেক কালো
ছিল। মনে
হচ্ছিল,
তিনি দাঁড়িতে কলপ
করেছেন। লাদেন
হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মিট বিসোনেটের বই
মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে
এ বই প্রকাশ করার
ফলে মার্কিন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং গোপন
তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তার
বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়ারও
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পেন্টাগন।লাদেনের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘
অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’
কতটা
ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত ছিল
সে ব্যাপারে বিসোনেট তার বইতে বর্ণনা
করেছেন। ইসলামাবাদের
অজ্ঞাতসারে এ অভিযান চালানো
হয়েছিল। তবে
মাত্র কয়েক মিনিটে এ
অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে
এবং এ সময় কোন
ধরণের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি।বিসোনেট লেখেন, ‘
লাদেনের ধরাশায়ী মুখ খুব কাছ
থেকে দেখা আমার জন্য
ছিল বিস্ময়কর। যাকে
ধরার জন্য আমরা গত
দশক ধরে যুদ্ধে লিপ্ত
রয়েছি তার লাশ কিনা
আমার সামনে পড়ে রয়েছে।’
বিন
লাদেনের পুরো শরীরের ছবি
তোলার পর বিসোনেট তার
মুখের ছবি তোলার জন্য
পা গুটিয়ে বসেন।
তিনি তার বইতে লেখেন,
‘
লাদেনের দাঁড়ি একবার ডানদিকে,
একবার বামদিকে নিয়ে আমি বেশ
কয়েকটি ছবি তুলি।
আমি সত্যিকার অর্থে এমনভাবে ছবি
তুলতে চাচ্ছিলাম যেন তার নাকের
স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়। কারণ
তার দাড়ি সত্যিই খুব
কালো ছিল। এক
পর্যায়ে আমি আমার অনুসারী
এক কমান্ডোকে বললাম,
তুমি ওর
চোখ মেলে ধর।’
বিসোনেট তার বইতে লাদেনের
অনেকগুলো ছবি তোলার কথা
বললেও তিনি সেগুলো প্রকাশ
করেননি।লাদেন
যে সত্যিই নিহত হয়েছেন
কম্পাউন্ডের কাউকে দিয়ে তা
নিশ্চিত হতে চাচ্ছিল নেভি
সিলরা। প্রথমে
এক নারীকে দিয়ে চেষ্টা
করা হয়েছিল। তবে
তিনি এ ব্যাপারে কমান্ডোদের
সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর
একটি মেয়ে কমান্ডোদের জানাল,
নিহত ব্যক্তি সম্পর্কে তাদের ধারনা সঠিক।বিসোনেটের
তিনশ’
তেরো পৃষ্ঠার বইয়ের
প্রায় অর্ধেক জুড়ে পাকিস্তানের
অ্যাবোটাবাদের অভিযানের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ নেই। এর
পরিবর্তে তিনি আলাস্কায় কিভাবে
শিকারের প্রশিক্ষণ নেন,
মার্কিন সিল
‘
টিম সিক্স’
এ যোগ
দেয়ার আগে নেয়া ব্যাপক
প্রশিক্ষণ,
ইরাক ও আফগানিস্তানে
পরিচালিত বিভিন্ন অভিযান এবং সোমালী
জলদস্যুদের হাত থেকে এক
মার্কিন নাগরিককে উদ্ধারে সফল অভিযানের বর্ণনা
করেছেন।তিনি
অভিযোগ করেন,
আফগানিস্তানে রাতে
পরিচালিত বিশেষ বাহিনীর অভিযান
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ব্যাপকভাবে ব্যাহত
হচ্ছে। তার
বইতে লাদেনের শয়ন কক্ষে তল্লাশির
কথা এসেছে। বলা
হয়েছে,
কলপের কৌটা ছাড়া
সেখানে কোন গুলির মজুদ
ছিল না। শয়নকক্ষের
দরজার ওপর দুটি বন্দুক
ছিল। এর
একটি একে-
৪৭ ও
অপরটি ম্যাকারভ পিস্তল। তবে
এতে কোন গুলি ছিল
না। এমনকি
লাদেন আত্মরক্ষার কোন চেষ্টাও করেন
নি। পাকিস্তানে
লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেয়া দুটি
হেলিকপ্টারের মধ্যে একটি বিধ্বস্ত
হয়। এ
ব্যাপারে বিসোনেট বলেন, ‘
মাত্র এক
ঘন্টা আগে আমি ধরেই
নিয়েছিলাম হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে আমরা সবাই
মারা যাচ্ছি। কিন্তু
পাইলট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে হেলিকপ্টার অবতরণ
করান। তবে
কমান্ডোরা কোন বিপদ ছাড়াই
হেলিকপ্টার থেকে বের হতে
পারবেন কিনা সে ব্যাপারে
উদ্বেগ ছিল।’