অডিও কেলেঙ্কারিতে কোণঠাসা ফারুক!

পরকিয়ার অভিযোগ ওঠার পরপরই চিফ হুইপের দায়িত্ব থেকেও জয়নুল আবদিন
ফারুককে অব্যাহতি দিয়ে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী
এ্যানীকে ভারপ্রাপ্ত চিফ হুইপের দায়িত্ব দেয়া হয় বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে
দলের নেতাকর্মীদের মধ্য।
এখন কিছুটা মুখ লুকিয়ে চলছেন ফারুক। কোনো সভায় যোগ দিচ্ছেন না, যাচ্ছেন না দলীয় কার্যালয় বা দলের কোনো কর্মসূচিতে।
পরকীয়ার বিষয়ে তার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডও পাওয়া যায় সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। ওই কথোপকথনের পুরুষ কণ্ঠটি ফারুকের এবং নারী
কণ্ঠ শিকাগো বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহর স্ত্রীর বলে দাবি করা
হয়। এ নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর সেনবাগে চলছে নানা প্রচারণা ও
গল্প। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তার ওই অডিও রেকর্ডটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের
মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
বিষয়টি প্রভাব ফেলতে পারে।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রহমত
উল্লাহর স্ত্রী শিউলির (মনি) সঙ্গে জয়নুল আবদিন ফারুকের পরকীয়ার সম্পর্ক
রয়েছে। ফারুকের ফোনালাপের আপত্তিকর একটি রেকর্ড বাংলালিকস নামের একটি
ফেসবুক পেজে প্রকাশ পায় মে মাসের শেষ সপ্তাহে। ওই ফোনালাপের পুরুষ কণ্ঠের
সঙ্গে ফারুকের কণ্ঠের হুবহু মিল রয়েছে। ফোনালাপ থেকেই প্রকাশ পায় রহমত
উল্লাহর স্ত্রী শিউলি (মনি) পরকীয়া করেছেন জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে।
ফেসবুক পেজে ফোনালাপটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক
থেকে ছড়িয়ে পড়ে মোবাইলে। তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর সেনবাগে
মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে অডিও রেকর্ডটি। এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক
অঙ্গন, বিশেষ করে বিএনপির দলীয় পরিমণ্ডলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। দলের অনেক
সিনিয়র নেতাই এ নিয়ে বিব্রত বোধ করেন।
সংসদের ১২তম অধিবেশন থেকে ১৭তম অধিবেশন পর্যন্ত টানা ৮৩ কার্যদিবস অধিবেশন
বর্জনের পর ৩ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন বেগম খালেদা
জিয়ার নেতৃত্বে সংসদে যোগ দেয় বিএনপি। সেদিনও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের
দায়িত্ব পালন করেন ফারুক। অধিবেশনের প্রথমার্ধে ওয়াকআউট করে বিএনপি। পরে
সংসদে যোগ দিলেও অনুপস্থিত ছিলেন জয়নুল আবদিন।
৫ জুন সংসদ অধিবেশনে ফারুকের পরিবর্তে বিএনপির সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন
চৌধুরী এ্যানী ভারপ্রাপ্ত বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। তখন
বলা হয়, জয়নুল আবদিন ফারুক অসুস্থ থাকায় সংসদ সদস্যদের মতামতের
ভিত্তিতে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এ্যানীকে চিফ হুইপের দায়িত্ব
দিয়েছেন। এ বিষয়টি স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।
জানা যায়, জয়নুল আবদিন ফারুকের পরকীয়া ফোনালাপের বিষয়টি খালেদা
জিয়ার কানে তোলেন দলের নীতি নির্ধারকদের কয়েকজন। এ ঘটনা জানার পরপরই
খালেদা জিয়া জয়নুল আবদিন ফারুককে অব্যাহতি দিয়ে দলের সংসদ সদস্য
শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে ভারপ্রাপ্ত বিরোধীদলীয়
চিফ হুইপ নিয়োগ দেন এবং ফারুককে কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার
নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সাধারণ সম্পাদক
মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে ঢাকায় রহমত উল্লাহর ঘনিষ্ঠ এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘রহমতের স্ত্রীর
সঙ্গে ফারুকের পরকীয়ার বিষয়টি বাংলালিকসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রতিনিয়ত রহমতকে বিব্রত হতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘রহমত জানিয়েছে, ঈদের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে ফোনালাপের
রেকর্ডসহ একটি অভিযোগপত্র দাখিল কলা হবে। অভিযোগপত্রে দল থেকে ফারুকের
অব্যাহতি চাওয়া হবে।’
অপর একটি সূত্র দাবি করেছে, রহমতের স্ত্রীই গোপনে তার মোবাইলে ফারুকের
সঙ্গে কথোপকথন রেকর্ড করেন। পরে যে কোনোভাবে রেকর্ডটি ইন্টানেটে ছড়িয়ে
পড়ে। জয়নুল আবদিন ফারুককে জব্দ করতেই রেকর্ডটি ছড়িয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, গত বছর ফারুক যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। ওই সফরে শিকাগোতে একটি
ইফতার পার্টিতে রহমত তার বাসায় ফারুককে দাওয়াত দেন। সেখানেই রহমতের
স্ত্রী মনির সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় ফারুকের। এরপর অক্টোবরে তিনি ফের
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। তখন শিকাগোতে রহমতুল্লাহর বাড়িতে চার দিন থাকেন।
আর তখনই পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এদিকে সংসদ চলাকালে কিডনির চিকিৎসা করাতে ৭ জুন চিকিৎসার জন্য স্বপরিবারে
সিঙ্গাপুর যান ফারুক। ফেরেন ১৯ জুলাই। ফেরার পর বর্তমানে বিরোধী দলীয় চিফ
হুইপ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী না জয়নুল আবদিন ফারুক তা নিয়ে গুঞ্জন ওঠে
দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। খালেদা জিয়া কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় দলের এই
গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব কে পালন করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘আমার কিডনিতে কিছু
সমস্যা ছিলো। তাই চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম। ৪৩ দিন হাসপাতালে
ছিলাম। সেখানে আমার কিডনিতে অপারেশন হয়েছে। এখন মোটামুটি সুস্থ।’
এখন চিফ হুইপের দায়িত্ব কে পালন করছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,
‘আমি আছি। আমি এ্যানীকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলাম, এখন আমি এসেছি।’
তবে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘আমাকে জাতীয় সংসদের ১৮তম বাজেট অধিবেশনে
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব পালন করেছি।
অধিবেশন শেষ। ফারুক ভাই যেহেতু দেশে ফিরেছেন তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন।
দল থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’ তবে বেশিরভাগ দায়িত্ব
তাকেই পালন করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সংসদ সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে অধিবেশন আহ্বান করার বাধ্যবাধকতার রয়েছে।
দলীয় সূত্র দাবি করেছে, চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেও চিফ হুইপের দায়িত্ব
দেয়ার বিষয়ে এখনও কিছু বলেননি দলের চেয়ারপারসন। আর ফারুকও লজ্জায়
চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। আগামী সংসদ অধিবেশনের আগে এ
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে, পরকীয়ার ঘটনা প্রকাশের আগে প্রতিদিনই প্রেসক্লাবের আলোচনা সভা
কিংবা মানববন্ধনে উপস্থিত থাকতেন সাংবাদিকদের কাছে প্রেসক্লাবের রাজা খ্যাত
ফারুক। চিকিৎসা শেষে ২-৩টি আলোচনা সভায় বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। জানা
গেছে, অখ্যাত সংগঠনের আয়োজকরা মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার আশায় ফারুককে
প্রধান অতিথি করতেন। কিন্তু এ ঘটনার পর তারাও তাকে এড়িয়ে চলছেন।
এদিকে দেশে ফিরে দলীয় কোনো কর্মসূচিতেও অংশ নেননি ফারুক। এমনকি দলের
কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তাকে
দেখা যায়নি বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। তবে একটি ইফতার পার্টিতে মঞ্চে
আসন গ্রহণ করেন তিনি। সেখানে বেগম জিয়াও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।
ঈদের দিন কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন
খালেদা জিয়া। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকলেও ফারুক অনুপস্থিত
ছিলেন। এছাড়া নয়াপল্টনে বেগম জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটা অনুষ্ঠানেও ছিলেন
না তিনি।
ঈদের আগে থেকে ফারুক নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করেন। গত মঙ্গলবার ঢাকা এসেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছর সংসদ এলাকায় পুলিশি আক্রমনের শিকার হন তিনি। এ ঘটনা
সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করে। এরপর পরকীয়ার ঘটনায়ও একটু অন্য
রকমভাবে সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি-বাংলামেইল