ধাক্কা মেরে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে

পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় রিকশা থেকে নিচে পড়ে যাই। এরপরই পায়ে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে দেয় পুলিশ
। পর পর দুই রাউন্ড গুলিতে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকি। তারপর আর কিছু মনে  নেই। রাজধানীর আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পথচারী মাহবুব কবীর (৪০) এখন পঙ্গু হওয়ার পথে। একই পায়ে পুলিশের পর পর দুই রাউন্ড গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে তার পা।  ছিন্নভিন্ন হয়েছে পায়ের হাড়
ও রগ। এরপরও নিস্তার নেই তার। পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করেছে। পুলিশ অ্যাসল্ট ও বিস্ফোরক মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন বলেন, গুলিবিদ্ধ মাহবুব কবীর মিরপুর পূর্ব ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি। সংগঠনটির মজলিসে শূরার সদস্য। গত সোমবার ভোরে মিরপুর ১০ নম্বরে তার নেতৃত্বেই মিছিল বের হয়। পরে ওই মিছিল থেকেই পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়েন।  পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন মাহবুব কবীরের স্বজনরা বলেন, কবীর ওইদিন মিছিল করেননি।  নয়া দিগন্ত প্রিন্টিং প্রেসের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি করেন। নিতান্তই পেটের দায়ে হরতালে অফিস করতে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। রিকশা নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ২ নম্বর যাচ্ছিলেন। তখন ছিল সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা। হঠাৎ একটি মিছিল হরতালের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে রিকশার পাশ দিয়ে চলে যায়। একটু পরেই সামনে ও পেছনে লোকজনের ছুটাছুটি দেখতে পান। অস্ত্র তাক করে পুলিশও এলোমেলোভাবে ঘুরতে থাকে। হঠাৎ একজন অপরিচিত লোক লাফ দিয়ে তার রিকশায় ওঠে। কিছুদূর গিয়ে আবার নেমে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের একটি গাড়ি পেছন দিক থেকে প্রচণ্ডবেগে ধাক্কা মারে। এতে তিনি  রিকশা থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান। তখনই অস্ত্রধারী পুলিশ দল জাপটে ধরে কিল-ঘুষি মারতে থাকে।  মিছিলকারী হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। মাহবুব কবীর বলেন, আমি বার বার বলেছি, আমি মিছিল করি নাই। অফিসে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তারা বুঝতে চাইলেন না। তখন অফিসের আইডি কার্ড দেখালাম, তাতেও কাজ হলো না। একজন পুলিশ সদস্য আমার পায়ে শটগান ঠেকালে অন্যরা গুলি করতে নিষেধ করেছিল। তখন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলে ওঠেন, মেরে দে। আর তখনই ওই পুলিশ সদস্য শটগান ঠেকিয়ে পরপর দু’রাউন্ড গুলি করে বসে। স্বজনরা জানান, ডা. তৌহিদুল হাসানের অধীনে চিকিৎসা চলছে তার। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৫-৬ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার পর পা রাখবেন না কেটে ফেলবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। কবীর প্রায় ৫ বছর ধরে নয়াদিগন্ত প্রেসে চাকরি করছেন। তার বাড়ি যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার রামনগর গ্রামে। তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন অন্তঃসত্ত্বা। ফারহান ইসলাম নামে তিন বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে তাদের। পুলিশের গুলিতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কবীরকে প্রথমে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালের প্রিজন সেলে নেয়া হয়। কবীরের বড় বোন সালমা হক বলেন, আমার ভাই কোন দলের রাজনীতি করে না। তাকে বিনা কারণে পুলিশ গুলি করেছে।
source:mzamin

Powered by Blogger.