১৮ বছর বয়সেই সহবাসের সুযোগ পাচ্ছে ভারতীয়রা

নয়াদিল্লি ধর্ষণ-রোধে বিল নিয়ে অবশেষে জটিলতা খানিকটা দূর হল৷বুধবার রাতে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে বিলের যে যে বিষয় নিয়ে মতানৈক্য ছিল তা মিটে গেছে৷ সব থেকে বড় প্রশ্ন ছিল, বিয়ের বয়স যেখানে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ২১ বছর, সেখানে সহবাসে সম্মতির বয়স কী হবে? এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিগোষ্ঠীর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, তা কমিয়ে ১৮ বছর করা৷ এই বিষয়টি নিয়ে এতটাই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল যে৷ গতকালই এটিকে মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে বিবেচনার জন্য
পাঠানো হয়েছিল৷ ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে তাঁরা তাঁদের সুপারিশ জানিয়ে দেন৷ টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিবাল বলেন, ‘আর কোনও সমস্যা নেই৷ সব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ আশা করছি বৃহস্পতিবারই ক্যাবিনেটের মঞ্জুরি মিলে যাবে৷ ‘ তবে ঠিক কী কী বিষয়ে নিয়ে তাঁর সঙ্গে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরথ ও অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তা তিনি বলতে চাননি৷
বেশ কয়েক বারই মন্ত্রকগুলির মধ্যে মতের অমিল থাকায় ক্যাবিনেটে আনা যায়নি এই বিল৷ বৃহস্পতিবার ফৌজদারি আইন সংশোধন নিয়ে ক্যাবিনেটের বৈঠক আছে৷ তার আগে ধর্ষণ-রোধে বিল নিয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠী সহমত হওয়ায়, তা নিয়ে ওই বৈঠকেও আলোচনা করা যাবে৷
সহবাসে সম্মতির বয়স ছাড়াও আর যা যা বিষয় নিয়ে জটিলতা দূর হয়েছে, তা হল শুধু যৌন নিগ্রহ নয়, আইনে ধর্ষণ শব্দটিও বহাল রাখা হবে৷ তবে তার সংজ্ঞা বৃহত্তর অর্থে ব্যবহার করা হবে৷
‘ধর্ষণ’ শব্দটি থাকবে না সে জায়গায় ‘যৌন নিগ্রহ’ আসবে, তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ হয় আইনমন্ত্রকের সঙ্গে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের৷ ‘ধর্ষণ’ শব্দটি থাকলে তা শুধু নারীকেন্দ্রিক হয়ে যাবে, তাই লিঙ্গসাম্য বজায় রাখতে ‘যৌন নিগ্রহ’ শব্দটিই থাক৷ তবে এ দিন তা নিয়ে মতভেদ দূর হয়ে গেছে৷ আইনকে নারী-কেন্দ্রিকই রাখা হচ্ছে৷
এ ছাড়াও কিছু বিষয় নিয়ে সহমত হয়েছে মন্ত্রিগোষ্ঠী৷ সেগুলি হল, ক্রমাগত পিছু ধাওয়া করা, অনাঙ্ক্ষিত ভাবে স্পর্শ করা, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি অ-জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে৷ এত দিন তা জামিনযোগ্য অপরাধ ছিল৷ মিথ্যা অভিযোগের ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর মত, বর্তমান আইনে যা রয়েছে, তা কার্যকর করতে হবে৷ আর কেউ যদি তেমন অভিযোগ জানান, সে ক্ষেত্রে ওই মহিলার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না৷
তবে এখনও পুরোপুরি সমস্যা দূর হচ্ছে না৷ কিছু রাজনৈতিক দলের বিলটি নিয়ে প্রবল আপত্তি আছে৷ বিশেষ করে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পাটির্র৷ ওই দুই দলের সাংসদরা জানিয়েছেন, বর্তমান অবস্থায় তাঁরা বিলটি পেশ করতে দিতে চান না৷ যদিও দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি, কিন্ত্ত দুই দলের সাংসদরা জানচ্ছেন, মহিলা বিলের যেভাবে তাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, সেভাবেই এই বিলের প্রবল বিরোধিতা করবেন৷ তা ছাড়া দলমতনির্বিশেষে অনেক সাংসদই জানাচ্ছেন, তাঁদের বিলটি নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷ এর অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ উদাহরণস্বরূপ তাঁরা বলছেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ’তে অ-জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হচ্ছে, তাতে সমস্যা বাড়বে৷ ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে৷
সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি তো বটেই, কম বেশি সব দলের সাংসদদের মধ্যেই আশঙ্কা রয়েছে, যেভাবে ধর্ষণ রোধে আইন করা হচ্ছে তাতে অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ কংগ্রেস সাংসদ সন্দীপ দীক্ষিত বলেছেন, ‘স্ট্যান্ডিং কমিটিতেও অপব্যবহারের প্রসঙ্গ উঠেছিল৷ তখন আমরা সকলেই বলেছিলাম, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু রক্ষাকবচ দরকার৷ না হলে মিথ্যা অভিযোগ আনলে হয়রানির সম্ভাবনা থাকছে৷’
অন্য আর একটিও প্রশ্ন রয়েছে৷ এমনিতে অর্ডিন্যান্সের মেয়াদ থাকে ছ-মাস৷ তা হলে এত তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে কেন? কংগ্রেসের জবাব, মূলত দুটি কারণে তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে৷ কংগ্রেস দলনেত্রী সনিয়া গান্ধী নির্দেশ দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব কড়া আইন পাশ করাতে৷ তাঁর কাছে নারী নিগ্রহ বন্ধ হওয়াটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ৷ দ্বিতীয়টি হল, আইন পাস করতে যত দেরি হবে, বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে ততই অসংবেদনশীলতার অভিযোগ আনবেন৷ ভোটের আগে বিরোধীদের হাতে কংগ্রেস এই অস্ত্র তুলে দিতে চাইছে না৷
এমনিতেই এমন পরিস্থিতি নিয়েদেশের তরুণরা ক্ষুব্ধ৷ তাই তাঁদের ক্ষোভ বাড়ার ও বিরোধী-প্রচারের আর কোনও সুযোগ সরকার দিতে চায় না৷ কংগ্রেসের হিসাব হল, এখন দেশের যা পরিস্থিতি তাতে বিজেপি, বাম সহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি এই বিলের বিরোধিতা করতে পারবে না৷ তাই এই আইন তাঁদের পাশ করাতেই হবে৷ আর এটা যেহেতু সংবিধান সংশোধন বিল নয়, তাই প্রবল বিরোধিতা ও হইহল্লার মধ্যেও তা পাশ করানো যাবে৷ ফলে বিল পাস নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই সরকারের৷

Powered by Blogger.