ত্বকী হত্যা: শামীম ওসমানসহ ৭ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠি


undefinedনারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রিফাত বিন ওসমান (২২)কে    জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।  তাকে ১০ দিন আটকে রাখার পর গতকাল বুধবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার  দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত বিকালে তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই প্রথমবারের মতো কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখালো। মামলার এজাহারে কোন আসামির নাম উল্লেখ
না থাকলেও ১৮ই মার্চ নিহত ত্বকীর পিতা মামলার বাদী রফিউর রাব্বি পুলিশ সুপারের কাছে একটি অবগতি পত্র দেয়-  যেখানে রিফাতের নাম ছিল। এদিকে বিকালে শামীম ওসমানসহ ৭ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছেন মামলার বাদী রফিউর রাব্বি।
আদালত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (কোর্ট সিএসআই) আশরাফুজ্জামান জানান, নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনোয়ারা বেগমের আদালতে মামলাটির শুনানি হয়। শুনানিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রহস্য উদঘাটন সহ তথ্য জানতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, গতকাল বুধবার ভোরে শহরের আমলাপাড়া এলাকা থেকে রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর আদালতের হাজতে নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত ১০ই মার্চ ডিবি পুলিশের একটি টিম আমলাপাড়া এলাকায় গিয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর ডিবি কার্যালয়ে ১০ দিন আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। বিষয়টি সকলে জানলেও পুলিশ ও ডিবি তা অস্বীকার করেছিল।
ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি এস এম মঞ্জুর কাদের জানান, গতকাল বুধবার ভোরে শহরের কালীরবাজার এলাকা থেকে রিফাত বিন ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে ওই এলাকার ওসমান গনির ছেলে। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রিফাতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানান, ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পরেই রিফাতকে আটক করা হয়। কিন্তু এতদিন পুলিশ সেটা স্বীকার করেনি। রিফাতের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা বেশ কিছু ক্লু ধরেই পুলিশ এগোতে থাকে। ওইসব ক্লু নিশ্চিত হওয়ার পরেই গতকাল বুধবার পুলিশ রিফাতকে গ্রেপ্তার দেখায়।
শামীম ওসমানসহ ৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এসপিকে চিঠি
এদিকে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক  শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান সহ ৭ জন যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছেন ত্বকীর পিতা মামলার বাদী রফিউর রাব্বি। গতকাল বুধবার বিকালে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে চিঠিটি দেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৮ই মার্চ রাতে রফিউর রাব্বি পুলিশ সুপারকে এক অবগতিপত্র দিয়ে ত্বকী হত্যার জন্য ৭ জনের সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
অভিযুক্ত ওই ৭ জন হলেন- সাবেক এমপি শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, সালেহ রহমান সীমান্ত (সম্প্রতি জাতীয় পার্টি বহিষ্কৃত নেতা হাজী রিপনের ছেলে) ও রিফাত (বুধবার সকালে গ্রেপ্তারকৃত), জেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জহিরুল ইসলাম পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাস ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন। এছাড়া, অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনের কথা উল্লেখ করা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রফিউর রাব্বির দেয়া একটি চিঠি আমি পেয়েছি।
সুজন-এর মানববন্ধন: ওদিকে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সম্পৃক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।
এসময় বক্তারা বলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। ত্বকী হত্যার কোন রহস্যও উদঘাটন করতে পারেনি। ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বেশ কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে পুলিশ সুপারের নিকট চিঠি দিলেও তাদের অনেকেই দেশত্যাগ করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে অবিলম্বে ত্বকীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
সুজন জেলা কমিটির সভাপতি আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, সুজন কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, জেলা কমিটির সমন্বয়কারী মুশিকুল ইসলাম শিমুল, সাধারণ সম্পাদক জিএম জব্বার চিশতি, ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরোর সদস্য শফিউদ্দিন আহমেদ, বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, জহির আহমেদ, শাহানারা বেগম, এডভোকেট মাকসুদা, মিজানুর রহমান, মালেকা বেগম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ৬ই মার্চ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ৮ই মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর চারারগোপের কুমদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের তীর থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৮ই মার্চ রাতেই নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি কারও নাম উল্লেখ না করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে কি কারণে ত্বকী খুন হতে পারে সে ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল তার মামলায়।

Powered by Blogger.